সোমবার চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্পের সূচনায় আমতলায় চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরপর এবার ধনধান্যে অডিটোরিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে হতে চলেছে সরকারি বৈঠক। সূত্রে খবর, সোমাবারের এই বৈঠকে রাজ্যের হাসপাতালগুলোর অবস্থা, রাজ্যে স্বাস্থ্যে সরকারি সাফল্যের খতিয়ান, সমস্যার, তার সমাধান সবই নিয়ে আলোচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
কারণ,গত কয়েক মাসে রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসকদের ঘাটতি, জাল ওষুধের অভিযোগ, বদলি-পদোন্নতিতে স্বজনপোষণ, স্বাস্থ্য শিক্ষার গুণমান, আরজি কর পর্ব-সহ একাধিক বিপন্নতার ছবি সামনে এসেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে অভিযোগও উঠেছে একাধিক। এমন এক প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসকদের সমস্যা সমাধানের জন্য আশ্বাস দিতে পারেন বলে আশা করছেন অনেকেই। যদিও এই বৈঠক নিয়ে সন্ধিহান ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর নেতৃত্ব। আর সেই কারণেই সোমবারের বৈঠকের আগে রবিবার সন্ধ্যায় ধনধান্যের বৈঠক ঘিরে আরজি করে সাংবাদিক বৈঠক করবেন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর নেতৃত্ব।
এই প্রসঙ্গে জেপিডির চিকিৎসক নেতা উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘যাঁরা এই বৈঠকের আয়োজন করেছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিলোত্তমা পরবর্তী ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতরের যে দুর্নীতি, পরিষেবার চিত্র সামনে এসেছে, তাঁরা চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করেছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য দফতর অন্যরকম চিন্তাভাবনা করছে।’ পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, ‘রাজ্যের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জয়জয়কার হত, যদি তার উদযাপনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ডাকতেন। তাহলে আমরা সত্যিই খুশি হতাম।’
প্রসঙ্গত, আরজি কর পর্বের পর স্বাস্থ্যক্ষেত্রে শশী পাঁজার নেতৃত্বে প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন নামে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, ধনধান্যের বৈঠকে প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন-এর সঙ্গে সচেতন দূরত্ব রেখে বৈঠকের আয়োজন সেরেছে রাজ্য গ্রিভান্স অ্যান্ড রিড্রেসাল সেল। এর পাশাপাশি অনেকে এ আশাও করছেন মুখ্যমন্ত্রীর বৃত্তে তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা শান্তুনু সেনের ফেরার সম্ভাবনা সোমবারের এই বৈঠক থেকে মিলবে।
সূত্রে খবর, ধনধান্যের এই বৈঠকে ২৬০০ সিনিয়র-জুনিয়র চিকিৎসকের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারির পাশাপাশি থাকবেন বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের প্রভাবশালী মুখরাও। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য ধনধান্যে মূল অডিটোরিয়ামের পাশাপাশি আরও দুটি হলে থাকছে লাইভ স্ট্রিমিং। উত্তরবঙ্গ-সহ দূরের জেলা থেকে বাসে করে রবিবারই আসছেন চিকিৎসক পড়ুয়ারা।
চিকিৎসক পড়ুয়াদের জন্য যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবেশ পত্র বিলির মধ্যেও সুদীপ্ত রায়-সুশান্ত রায়-অভীক দে’দের বার্তা দেওয়ার ইঙ্গিত রাজ্য গ্রিভান্স সেলের। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, বর্ধমান, কল্যাণী জেএনএম, ডায়মন্ড হারবারে সবচেয়ে বেশি প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছে। সূত্রে এ খবরও মিলছে, প্রবেশ পত্র পাঠানো হয়েছে এসএসকেএমে ১০০, কলকাতা মেডিক্যালে ৭০, নীলরতন সরকারে ২৫, আরজি করে ২৫, সিএনএমসিতে ২৫, সাগর দত্তে ৭৫, ডায়মন্ড হারবারে ২২০, বর্ধমান মেডিক্যালে ১২০, কল্যাণী জেএনএমে ৩০০ এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ১৫০ টি। এদিকে রাজ্য গ্রিভান্স সেলের সদস্য যোগিরাজ রায় জানান, ‘বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তার একটা সংক্ষিপ্তসার করে পাঠানো হয়েছিল। সেগুলোর বিষয়েই আলোচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষক চিকিৎসক, ছাত্র, সার্ভিস ডক্টরস সকলেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মোটামুটি আড়াই থেকে তিন হাজার হবে।’