অনশন মঞ্চে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ফোনে কথা মুখ্যমন্ত্রীর

শনিবার দুপুরে আচমকা অনশন মঞ্চে চলে গেলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সঙ্গে যান স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। এরইমধ্যে বেশ কয়েকদিন জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায়। তাঁদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে খোঁজখবর নেন। অনশনে অনড় আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সরকারের তরফে বারবার অনশন তোলার কথা বলা হলেও ১০ দফা দাবি মানা না পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের অবস্থান থেকে নড়তে নারাজ। দেওয়া হয় আল্টিমেটামও। সোমবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ধর্মঘটের ডাকও দেওয়া হয়।

সূত্রে খবর, শনিবার দুপুর ঠিক ২টো নাগাদ অনশন মঞ্চে চলে আসেন মনোজ-নন্দিনী। জুনিয়র চিকিৎসকদের শোওয়ার জন্য যে খাট রয়েছে সেখানে বসে কথা বলতে দেখা যায়। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক অর্ণবের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। প্রসঙ্গত, ১৫ দিন অনশনে থাকলেও এর আগে পর্যন্ত সরকারের কোনও প্রতিনিধিকে অনশন মঞ্চে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীর আসার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হলেও দেখা মেলেনি তাঁরও। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বারবার আসার দাবি করা হলেও কাউকেই সেই অর্থে দেখা যায়নি। অবশেষে ১৫ দিনের মাথায় সশরীরে এলেন মনোজ পন্থ, নন্দিনী চক্রবর্তীরা। জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে কথাও বলান। স্পিকারে সেই ফোনবার্তা শোনানো হয় চিকিৎসকদের। আগামী সোমবার তাঁদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠকে বসতে চান মমতা। ওইদিন বিকেল ৫টায় সময় দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মমতা চিকিৎসকদের বলেন, ‘পায়ে ধরে অনুরোধ করছি। অনশন তুলুন।’ সব দাবি যে ইতিমধ্যেই মেনে নেওয়া হয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘আমি দিদি হিসেবে বলছি। আন্দোলন থেকে সরে এস। কাজে যোগ দাও।’ ফোনে ডাক্তারদের ১০ দফা দাবিও এদিন শোনেন তিনি।

চিকিৎসকদের দশ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের পদত্যাগ। শনিবার যখন মুখ্যমন্ত্রী অনশনকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, সেই সময় এক অনশনরত চিকিৎসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগের দাবি করেন। এদিন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অক্ষমতার দায় স্বাস্থ্য সচিবকে নিতে হবে। স্বাস্থ্য সচিবকে অবিলম্বে পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।’ তবে তিনি তা করবেন না বলে জানিয়ে দেন আন্দোলনকারীদের। এরই রেশ ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা পরিবারের সবাইকে সরিয়ে দেবে? এটা সম্ভব নয়।’ সঙ্গে এটাও বলেন, তুমি কি এটা জানো অনেকে আন্দোলন করেও প্রাইভেট নার্সিংহোমে যোগদান করেছে, আমি কি এটা তদন্ত করি। যদি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে নিশ্চয়ই তদন্ত করব।’

জুনিয়র ডাক্তারদের তরফ থেকে ফোনে মুখ্যমন্ত্রীকে এদিন এও বলেন, ‘আপনি যে সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলছেন, সেগুলি লিখিতভাবে জানান। একটা ভুল ধারনা তৈরি  হয়েছে যে, শুধুই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরা অনশন করছি, এমনটা নয়।’ তবে এদিকে এদিন মমতা ফোনে কথা বলা সত্ত্বেও অনশন মঞ্চ থেকে বারবার মুখ্যমন্ত্রীর আসার দাবি উঠতে থাকে। চিকিৎসকরা তাঁর সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চান। মুখ্যমন্ত্রী কথা বলতে রাজি হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি আগামী মঙ্গলবার সময় দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি অনশনরত চিকিৎসকরা। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর নিজের কিছু কর্মসূচি বাতিল করে তিনি আগামী সোমবার নবান্নে বৈঠকে বসবেন। বিকেল ৫টায় সময় দেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, ‘পাঁচটা মানে কিন্তু পাঁচটাই। আমাকে ২-৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখবেন না। আমার অনেক কাজ আছে।’ সূত্রে খবর, দেবাশিস হালদার, কিঞ্জল নন্দ সহ একাধিক চিকিৎসক এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। মমতা ১০ দফা দাবি জানতে চান। একে একে সব দাবির কথা বলেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 3 =