নাগরিক মিছিল দখল নিল রাজপথের

আরজি করের ঘটনার নাগরিক মিছিলের মধ্যে দিয়ে বিচারের দাবিতে ফের গর্জে উঠল শহর। মঙ্গলবার সন্ধেয় কলেজ স্ট্রিট থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত হয় নাগরিক মিছিল। এই মিছিলের আয়োজন করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। মিলিতভাবে আরজি করের ঘটনার বিচারের দাবি তুললেন তাঁরা।

এদিনের মিছিলে স্লোগান উঠল,‘লক্ষ কণ্ঠে একই স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর’। তবে উদ্যোক্তারা মিছিল শুরু আগেই জানিয়েছিলেন, বেশ কয়েকটি দাবি তোলা হবে এদিনের মিছিলের থেকে। যার মধ্যে রয়েছে আরজি কর হাসপাতালে খুন, ধর্ষণ, প্রমাণ লোপাটের যুক্ত সকল দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, নারী নিরাপত্তা, নারী স্বাধীনতা, নারীদের সমান অধিকার চাই, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুর্নীতি, মাফিয়া-সিন্ডিকেট রাজের অবসান চাই এবং শাসকের ‘থ্রেট কালচার, পুলিশি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চাই। এই মিছিলের আয়োজকদের মধ্যে চিকিৎসক, জুনিয়র ডাক্তার, স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত বিভিন্ন অংশের সংগঠন যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন যৌন কর্মী, শিক্ষক, অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মীরাও। ছিলেন নাগরিকদের বিভিন্ন সংস্থাও।

মঙ্গলবারের এই মিছিলের পরে সন্ধ্যা থেকে শহরের অনেকগুলি জায়গায় রাস্তা দখল করেন প্রতিবাদীরা। সেখানে বক্তব্য যেমন পেশ করা হয়, তেমনই সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও ধ্বনিত হয় প্রতিবাদ। এই রাস্তা দখল চলে রাত পেরিয়ে। এদিকে রাত পোহালেই মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবস। বুধবার ভোরে মহালয়াও। তখনও চলবে প্রতিবাদ জানানো। কলকাতা, শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় নাগরিকদের জমায়েত থেকে আরজি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবি উঠবে আরও জোর গলায়।

গত ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালে ট্রেনি তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে খুন করা হয়েছে আপাতত সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। খুনের সঙ্গে মিলেছে শারীরিক নির্যাতনের চিহ্নও। রাজ্য সরকারের আধিকারিক এবং হাসপাতালের প্রশাসকরা এই অপরাধের চিহ্ন লোপাটের চেষ্টা করেছিল এমন অভিযোগও ওঠে। এরপরই এর বিরুদ্ধে সর্বত্র সোচ্চার হন মানুষ। গত প্রায় দু’ মাস ধারাবাহিক আন্দোলন চলে রাজ্যের নানা জায়গায়। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন। এর আগেও গত ১৪ অগাস্ট রাতদখল করেছেন মানুষ। তারপর লাগাতার মিছিল, সভা, মানববন্ধন হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করেছেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করতে বাধ্য হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আন্দোলনকারীদের চাপে কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই আধিকারিককে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু যে দাবিগুলি আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা উত্থাপন করেছিলেন তার সব দাবি এখনও পূরণ হয়নি। খুন, ধর্ষণের তদন্ত করছে সিবিআই। এ নিয়ে নজর রাখছে সুপ্রিম কোর্টও। তদন্তের অগ্রগতি কী ভাবে হচ্ছে বা তাতে কী সামনে আসছে তা খতিয়ে দেখছে শীর্ষ আদালত। ইতিমধ্যেই সেই সংক্রান্ত দু’দিন শুনানি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।

আগামী ৯অক্টোবর রাজ্যে শারদীয়ার উৎসব শুরুর দিন। সেদিনই সেই তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের দু’ মাস পূর্ণ হবে। আর সেই কারণেই এবার প্রতিবাদের উচ্চারণেই উৎসব পালন করতে চান রাজ্যবাসীর একাংশ। সেখান থেকে তাঁরা আওয়াজ তুলতে চান, ‘তিলোত্তমার বিচার চাই।’ আন্দোলনের এই পর্যায় শুরু হচ্ছে উৎসবের মুখে, শুরুয়াতে—  মঙ্গলবারের মহামিছিলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − 11 =