মনোজিৎ মিশ্র ওরফে ম্যাঙ্গো মহিলাদের সঙ্গে অত্যন্ত অশালীন আচরণ করতো এমনটাই দাবি করছে তারই কলেজের একাধিক জুনিয়র এবং সহপাঠী। সঙ্গে তাঁরা এও জানান, যৌনতা, মারপিট, এসবের প্রতিই আকৃষ্ট ছিল ম্যাঙ্গো। কোনও নতুন মেয়ে কলেজে এলেই ম্যাঙ্গো ‘ছক কষত‘ তাঁকে কী ভাবে নিজের কব্জায় নেওয়া যায় সে ব্যাপারেও। একইসঙ্গে প্রস্তাবও দিতো বিয়ের। এরপর ২০২১ সালে কসবা ল‘কলেজের তৃণমূল ইউনিট থেকে সরে যায় সে।তা সত্ত্বেও দাপট কমেনি ম্যাঙ্গোর।সূত্রে এ খবরও মিলছে যে এই বিযের প্রস্তাব সে দিয়েছে একাধিক ছাত্রীকে। চেষ্টা করেছে হেনস্থা করারও।
কসবার ওই কলেজেরই এক পড়ুয়া জানান, ‘প্রায় সমস্ত কিছুই নিজের ফোনে রেকর্ড করার অভ্যাস ছিল মনোজিতের। একাধিক ছাত্রীর ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করত। যে মহিলাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত, তাঁদের গোপন ভিডিও তুলে বন্ধুদের পাঠাত। বিভিন্ন গ্রুপে সেই সমস্ত ভিডিও পোস্ট করে মেয়েদের বডি শেমিং করত ম্যাঙ্গো ও তার সঙ্গীরা।‘মলেস্টেশন, হেনস্থা, শারীরিক নিগ্রহ এবং হুমকি দেওয়ার একাধিক অভিযোগে পুলিশের খাতায় বহু আগে থেকেই নাম রয়েছে মনোজিৎ মিশ্রর। তার ‘কুকীর্তি‘ নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ অবগত ছিল বলেই সূত্রের খবর। তৃতীয় বর্ষের এক আইনের ছাত্র এও জানান, মনোজিতের এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিল কলেজ কর্তৃপক্ষও। কিন্তু তার এই বাড়বাড়ন্তে রাশ টানার চেষ্টা করা হয়নি। বরং সমস্তটা জেনেও না জানান ভান করে থাকত। সঙ্গে এ খবরও মিলছে, এর আগেও টিচার–ইন–চার্জের কাছে যৌন হেনস্থার অভিযোগ জমা পড়েছে ম্যাঙ্গো ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে।তবেকোনওপদক্ষেপ করাহয়নি।মনোজিতের মতো ছেলেরা থাকলে এই কলেজ কারওজন্য নিরাপদ নয় বলেও মনে করছেন ওই কলেজের অধিকাংশই।
এদিকে সূত্রে খবর, পুলিশি জেরায় ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে মনোজিৎ। এই স্বীকারোক্তির পাশাপাশি সে এও বলেছে, ‘আমার ক্ষমতা কী সবাই জানত। ওই মেয়েটাও। আগে এমন বহু কেস করেছি কিন্তু মেয়েটা কমপ্লেন করে দেবে ভাবতে পারিনি। গুরুত্ব দিইনি।‘ সে আরও বলে, ‘ধর্ষণ করেছি। প্রমিত আর জাইব ভিডিও করেছে।‘
এদিকে নির্যাতিতার বয়ান অনুসারে নির্যাতিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে সহবাসের জন্য জোরাজুরি করেছিল ম্যাঙ্গো। তিনি রাজি না হওয়ায় ভয়ঙ্কর নির্যাতন করা হয় তাঁকে। ঘটনার পর নির্যাতিতা অভিযোগ দায়ের করেন। তখনই এক ‘পরিচিত দাদা‘-কে ফোন করে ম্যাঙ্গো। আগেও বহুবার তাকে সে বাঁচিয়েছিল কিন্তু এবার আর সাড়া মেলেনি তার থেকে। ফলে ম্যাঙ্গো বুঝে যায়, বিপদ আসন্ন।
তবে হাল ছাড়েনি ম্যাঙ্গো। প্রথমে ফোন করে শাসানো হয় নির্যাতিতাকে। সেই ফোন কলের প্রমাণও ইতিমধ্যেই চলে এসেছে পুলিশের হাতে। এরপর নির্যাতিতাতে ধর্ষণ করার ভিডিও নিজেদের গ্রুপ থেকে ডিলিট করে দিতে বলে জইব আর প্রমিতকে। মনোজিতের নির্দেশ ছিল, ‘সব ভিডিও উড়িয়ে দে‘। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশ নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে মনোজিৎ, জইব ও প্রমিতকে।
তবে একটা প্রশ্ন সবার মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে কসবার ঘটনায় তিনজনের গ্রেফতারিতে। প্রশ্ন উঠছে, কেন তারা কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল না তা নিয়েও। কার ভরসায় ছিলেন মনোজিতরা, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এদিকে সূত্রে খবর, মনোজিৎ তার দুই শাগরেদকে বলে বাড়ি ফিরে যেতে। সঙ্গে দেয় অভয়বাণী, ‘চিন্তা করিস না। সব সামলে নেব।‘ এরপর নিজের আস্তানায় ফিরে মনোজিৎ তার সেই ‘পরিচিত দাদা‘ বা ‘মেন্টর’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বলে তার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই ‘দাদা’-র কাছে তার অনুরোধ ছিল, ‘দেখো, যেন এফআইআর না–হয়।’ এর আগেও মনোজিৎ অপরাধ করার পর তাকে পুলিশের হাত থেকে এই ‘দাদা’-ই বাঁচিয়ে দিতেন। মনোজিৎ সম্ভবত ভেবেছিল, এ বারও তা–ই হবে। এফআইআর–ও হবে না। তাকে কেউ ছুঁতেও পারবে না। ফলে সে থেকে যায় নিজের ঠিকানাতেই এবং বাকি দু’জনকেও সেটাই করতে বলে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মনোজিৎ কলেজে যায়নি। ফোনও বিশেষ ধরেনি। একবারই একজনের ফোন ধরে সে বলে, ‘আমার সঙ্গে খুব খারাপ হয়েছে।’ এরপরই ঘটে গ্রেফতারি।