ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই), যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তার মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে তারল্য সহায়তা। বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি বা ‘ডিউরেবল লিকুইডিটি’ প্রদানের ক্ষেত্রে আরবিআই অত্যন্ত দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। নীতিতে ঘোষণা করা হয়েছে ১ ট্রিলিয়ন রুপির ওপেন মার্কেট অপারেশন (ওএমও) ক্রয় এবং ৩ বছরের মেয়াদি ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ইউএসডি/আইএনআর বাই-সেল সোয়াপ। এর মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসে মোট ১.৪৫ ট্রিলিয়ন রুপির দীর্ঘমেয়াদি তারল্য অর্থনীতিতে প্রবাহিত হবে। অনুমান করা যায়, আগামী চতুর্থ প্রান্তিকেও আরবিআই এই ধরনের তারল্য সহায়ক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে পারে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে বন্ডের ফলনে এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার আরও নরম হতে পারে।
অন্যদিকে, আগামী প্রায় বারো মাসে গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ হারে মুদ্রাস্ফীতি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রকৃত সুদের হার আরবিআই-এর ধারণকৃত নিরপেক্ষ প্রকৃত সুদের হার (১.৪ থেকে ১.৯ শতাংশ) এর তুলনায় যথেষ্ট বেশি। এর অর্থ হলো, সুদের হার কমানোর চলমান চক্র এখনও শেষ হয়ে যায়নি। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে আরও সুদ হ্রাসের সম্ভাবনা বিদ্যমান।
সার্বিকভাবে বলা যায়, আরবিআই-এর এই নীতি অর্থনীতিতে তারল্য বাড়িয়ে ঋণপ্রবাহকে সহজ করবে এবং বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুদের হারকে আরও যুক্তিসঙ্গত স্তরে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করবে।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, ভারতের অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারণে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর মুদ্রানীতি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক ঘোষণায় আরবিআই যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো তারল্য সহায়তা, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি বা ডিউরেবল লিকুইডিটি।
তারল্য সহায়তার পদক্ষেপ
- আরবিআই ঘোষণা করেছে ১ ট্রিলিয়ন রুপির ওপেন মার্কেট অপারেশন (ওএমও) ক্রয়।
- পাশাপাশি ৩ বছরের মেয়াদি ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ইউএসডি/আইএনআর বাই-সেল সোয়াপ কার্যকর করা হবে।
- এই দুটি পদক্ষেপ মিলিয়ে ডিসেম্বর মাসে অর্থনীতিতে ১.৪৫ ট্রিলিয়ন রুপির দীর্ঘমেয়াদি তারল্য প্রবাহিত হবে।
এই পদক্ষেপগুলো শুধু স্বল্পমেয়াদি বাজার স্থিতিশীলতার জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে ঋণপ্রবাহকে সহজতর করবে। অনুমান করা যায়, আগামী চতুর্থ প্রান্তিকেও আরবিআই একই ধরনের সহায়ক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে পারে।
বন্ড বাজার ও ঋণ সুদের হারে প্রভাব
তারল্য বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে বন্ডের ফলনে। যখন বাজারে পর্যাপ্ত অর্থপ্রবাহ থাকে, তখন বন্ডের ফলন কমে আসে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের খরচও কমে যায়। ফলস্বরূপ, ব্যাংক ঋণের সুদের হার আরও নরম হতে পারে, যা বিনিয়োগ ও ভোগব্যয়কে উৎসাহিত করবে।

