‘যত চেষ্টাই করা হোক বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। কেউ বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গায়ে আঁচড় কাটতে পারবে না। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি অমিত শাহ হন তাহলে বাংলারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা মনে রাখবেন।‘ মালদার সুজাপুরের হাতিমারির ময়দানের সভা থেকে ঠিক এই ভাষাতেই বিজেপিকে বিদ্ধ করতে দেখা গেল তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে অভিষেক বলেন, অনেক জায়গায় নিজেদের মধ্য়ে যোগসাজশ করে প্রার্থী দিয়েছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের এক-একটি দল এক জায়গায় প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সব জায়গায় প্রার্থী দিয়েছে। কারণ তৃণমূলের সঙ্গে একমাত্র মানুষের বোঝাপাড়া রয়েছে। অন্য দলের সেই বোঝাপাড়া নেই। মালদার মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ কারণ, ২০২১ সালের লড়াইয়ে যেকটি জেলা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল তার মধ্যে মালদহের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জেলার ১২ বিধানসভার মধ্যে ৮টি আসনে তৃণমূলকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছিলেন। আপনাদের কথা দিচ্ছি মালদার সার্বিক উন্নয়ণের দায়দায়িত্ব আমাদের।‘
এরই পাশাপাশি অভিষেক এও জানান, ‘বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে আমারা দেব না। যারা ভেবেছিল, ধর্মে ধর্মে বিভেদ তৈরি করে বাংলায় মানুষকে অতিষ্ট করে ছাড়ব তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ায়ের হাত শক্ত করেছে। আপনাদের বলতে এসেছি, এবার ভোটে কানে শুনে নয় চোখে দেখে ভোট দিতে হবে।’ পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের নেতদের বিদ্ধ করতে তুলে ধরেন উত্তর মালদহ থেকে বিজেপি ও দক্ষিণ মালদহ থেকে কংগ্রেস নেতার কথাও। এই প্রসঙ্গে অভিষেক জানান, ‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিল। আপনারা দেখুন দুজন যে সাংসদ হয়েছেন তার একটা বৈঠক করেছেন যদি দেখাতে পারেন তাহলে আপনাদের সামনে আসব না।’ এরই রেশ ধরে তুলে ধরেন রাজ্য সরকার মালদাবাসীদের জন্য কি করেছেন তার পরিসংখ্যানও। এই প্রসঙ্গে অভিষেক জানান, ‘গত ১১ বছরে শুধু মালদহ জেলার জন্য রাজ্য সরকারের ৪টি দফতর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার কাজ করেছে। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদি সরকার মালদহের জেতার পর একশো দিনের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমাদের সামনে তিনটে রাস্তা খোলা রয়েছে, প্রথমত দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রকে বোঝানো যে আমাদের প্রাপ্য টাকা আপনারা আটকে রাখতে পারেন না। টাকা ছাড়তে হবে। মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক করে ওই টাকা ছাড়তে অনুরোধ করেছেন। কেন্দ্র টাকা ছাড়েননি। এখন আমাদের বাকি দুটো রাস্তা, এক মোদি পায়ে ধরো নয়তো দিল্লি গিয়ে আন্দোলন করে টাকা আদায় করে আনা।’ এরপরই মালদাবাসীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান, ‘আপনারা কী চান বলুন।‘ একইসঙ্গে এদিনের সভা থেকে দলের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভাল কাজ না করলে তিন মাসেই বদল করা হবে পঞ্চায়েত প্রধানকে। সঙ্গে প্রতিশ্রুতি, ‘আমি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলে যাচ্ছি। এ বার থেকে ২ মাস অন্তর আমি মালদহ জেলায় আসব। পঞ্চায়েতের কাজ নিজেই পর্যালোচনা করব। তিন মাস অন্তর পঞ্চায়েতের প্রধানের কাজের পর্যালোচনা আমি নিজে করব। প্রধান ভাল কাজ করলে মেয়াদ বাড়ানো হবে। ভাল কাজ না করতে তাঁকে সরানো হবে। যদি পদে থেকে কোনও দুর্নীতি করেন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে প্রশাসনিক ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ সেখানেই নিজের বক্তৃতার শেষের দিকে পঞ্চায়েত ভোটের জয়ের পর বিজয়োৎসব কোথায় হবে তা-ও সুজাপুরের নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দেন।’
এদিনের সভা থেকে আক্রমণ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জনকে বিদ্ধ করে বলেন, ‘ কোনওদিন দেখেছেন অধীর চৌধুরী এনিয়ে মোদিকে আক্রমণ করেছে? এনআরসি নিয়ে বিজেপি যখন বড়বড় ভাষণ দিচ্ছিল তখন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি যতদিন আছি ততদিন বাংলায় এনআরসি হবে না। এখানে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন করতে দেব না। যতদিন বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে ততদিন বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে কেউ একটা আঁচড় কাটতে পারবে না। ভারতের স্বারাষ্ট্র মন্ত্রীর নাম যদি অমিত শাহ হয় তাহলে বাংলার স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।‘এরই রেশ ধরে অভিষেক এও বলেন, ‘অমিত শাহকে যে প্যারামিলিটারি নিরাপত্তা দেয় তারাই অধীর চৌধুরীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। অধীর চৌধুরীর দিদির পুলিশের উপরে আস্থা নেই। দাদার পুলিশের উপরে আস্থা।’ এই প্রসঙ্গে অভিষেক এদিনের সভা থেকে জানতে চান, ‘কোনওদিন দেখেছেন, মোদি, অমিত শাহ দিলীপ ঘোষকে, শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছে? সবাই আক্রমণ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। চেষ্টা করছে ইডি, সিবিআই করে ঘরে বসিয়ে দিতে। পারেনি। দিল্লির গদ্দারদের কাছে তৃণমূল কংগ্রেস মাথা নত করব না। ওরা বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে। চারশো টাকার গ্যাসের দাম বারোশো টাকা।’