কসবার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই জোকার নামী ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের ভিতরে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা সামনে এল। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত যুবককে। তবে এই ঘটনা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। কারণ, শুক্রবার রাতে এই ঘটনা ঘটলেও সমগ্র ঘটনা সার্চ লাইটের আলোয় আসে শনিবার। শনিবার যত বেলা গড়িয়েছে ততই এই ঘটনায় সামনে এসেছে নিত্য নতুন তথ্য। কারণ, শনিবার বিকেল নাগাদ ওই নির্যাতিতার বাবা জানান, ‘মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়নি।’ পাশাপাশি এও জানান, ‘মেয়ে আমাকে জানিয়েছে ধর্ষণের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। বাড়িতে ফেরার পরে আমায় বলে, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। এমনকী, যে গ্রেফতার হয়েছে তার সঙ্গে আমার মেয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।’ শুধু তাই নয়, এরপর তিনি সামনে আনেন আরও বিস্ফোরক এক তথ্য।তিনি জানান, তাঁর মেয়ের শারীরিক পরীক্ষার সময় নাকি ধর্ষণের কথা পুলিশই বলতে বলেছিল।সঙ্গে তিনি এও জানান, শুক্রবার রাত ৯ টা ৩৪ মিনিট নাগাদ ফোন আসে তাঁর মেয়ের। ফোনে মেয়ে তাঁকে জানিয়েছিল, অটো থেকে পড়ে গিয়েছে সে। এরপর তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে এসএসকেএম–এর নিউরোলজিস্ট ডিপার্টমেন্টে। ফোন পাওয়ার পরই তরুণীর বাবা এসএসকেএম–এর নিউরোলজিস্ট ডিপার্টমেন্টে পৌঁছন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন হরিদেবপুর থানা তাঁর মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। এরপর মেয়ের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন আদৌ এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।
ওই তরুণীর বাবার আরও অভিযোগ, আইআইএমের মতো কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করতেই এই ‘ষড়যন্ত্র’। তদন্তের নাম করে একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে বলেই মনে করেন তিনি।
এদিকে সমস্যা অন্যদিকে। নির্যাতিতার বাবার বয়ান এমন হলেও, পুলিশের কাছে যে অভিযোগ জানিয়েছেন তরুণী সেই অভিযোগ পত্রে স্পষ্ট লেখা আছে, শুক্রবার সন্ধেয় ক্যাম্পাসিং–এর কথা বলে ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র তাঁকে ভিতরে নিয়ে যান। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই ছাত্র তাঁকে কোনও খাতায় সই না করিয়েই হস্টেলের ভিতরে নিয়ে যান।কলেজে প্রবেশ করার পর অন্য একটি কাজ আছে বলে তাঁকে বয়েজ হস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও ওই অভিযোগ পত্রে জানান তরুণী। পাশাপাশি এও উল্লেখ করেন, সেখানে নিয়ে গিয়ে তাঁকে জল ও পিৎজা খেতে দেওয়া হয়। আর তা খাওযার পরই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন ওই তরুণী। সেই সুযোগেই নাকি তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন ওই ছাত্র। তরুণী বাধা দিতে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়ও পরে ধর্ষণ করা হয়।
এরপর শুক্রবার রাতেই তরুণী ঠাকুরপুকুর থানায় পৌঁছে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাঁকে পাঠায় হরিদেবপুর থানায়, কারণ ঘটনাস্থল সেই থানার আওতাভুক্ত। অভিযোগ দাযের হতেই পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শুরু করে এবং রাতেই অভিযুক্ত ছাত্রকে আটক করে। এরপর শনিবার শনিবার অভিযুক্তকে আলিপুর আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিচারক অভিযুক্তকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এর পরে শনিবার দুপুরে অভিযোগকারিণীকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, তিনি পরীক্ষা করাতে আপত্তি জানান। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের সময় তাঁর গায়ে থাকা পোশাকও পুলিশকে দিতে তিনি রাজি হননি। এমনকি তদন্তের স্বার্থে তরুণীর ফোন বাজেয়াপ্ত করা হলে, পুলিশ তাঁর কাছে পাসওয়ার্ড চাইলে তাও তিনি দিতে অস্বীকার করেন। পুলিশের একাংশের মতে, এই ধরনের আচরণে তদন্তে বড় বাধা তৈরি হচ্ছে।
এদিকে এদিন ওই তরুণীর বাবারব য়ান ও তরুণীর পুলিশকে সহায়তা না করার ঘটনায় এই মামলা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।ফলে মামলা কতদূর গড়াবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।একইসঙ্গে প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকাও।