উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলেও কোনও বিষয়ে পাস মার্ক না উঠে থাকলে সেই বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। কারণ, অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ভবিষ্যৎ গড়তে যে বিষয়টির প্রয়োজন তাতেই অসফল হয়েছেন পরীক্ষার্থী। অথচ ৯(২) নিয়মের সুবিধা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে পরীক্ষার্থীকে। কিন্তু মার্কশিটে দরকারি বিষয়টির পাশে ‘অসফল’ই লেখা থাকছে। সেক্ষেত্রে রেজাল্ট ফেরত দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষাটি ফের ২০২৫-এ দেওয়া যাবে বলেই জানাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এমন সিদ্ধান্তে বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হবে বলে মত সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যর। তিনি জানান, এবছর বিজ্ঞান শাখায় ৯(২) নিয়মের সুবিধা পেয়ে যতজন উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ফিজিক্সে অসফল হয়েছেন। অধিকাংশের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, গণিতের পাশাপাশি ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে বায়োলজি ছিল। ফিজিক্সে অসফল হওয়ায় ৯(২) নিয়ম কার্যকর হওয়ায় সেটি ঐচ্ছিক হয়ে গিয়েছে এবং বায়োলজি মূল বিষয় হয়ে গিয়েছে। আর এখানেই তৈরি হয়েছে সমস্যা। কারণ, ফিজিক্স নিয়ে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুকরা আর কোনওদিন ওই বিষয়টি নিয়ে পড়তে পারবে না। দ্বিতীয়ত, যে কোনও জয়েন্টের ক্ষেত্রে ফিজিক্সে পাস বাধ্যতামূলক। ফলে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ইচ্ছুকদের ক্ষেত্রেও ফিজিক্সে ফেলের বিষয়টি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ৯(২) নিয়ম অনুযায়ী, বাংলা, ইংরেজি বাদে তিনটি মূল বিষয়ের মধ্যে পরীক্ষার্থী কোনও একটি বিষয়ে অসফল হলে, তাঁর সেই বিষয়টি ঐচ্ছিক বিষয় হয়ে যায়। এবং ঐচ্ছিক বিষয়টি মূল বিষয় হয়ে যায়। এই নিয়মের সুবিধায় অনেক ছাত্রছাত্রীই উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু সমস্যায় পড়েন সেই ছাত্রছাত্রীরা, যাদের ভবিষ্যৎ গড়তে প্রয়োজনীয় বিষয়টি ঐচ্ছিক হয়ে যায়। সংসদের নিয়মে, ওই ছাত্রছাত্রীরা ৯(২) নিয়মের সুবিধা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাছে নিজেদের রেজাল্ট (মার্কশিট ও সার্টিফিকেট) সারেন্ডার করে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিকে স্পেশাল বা কন্টিনিউয়িং পরীক্ষার্থী হিসাবে ওই বিষয়ের পরীক্ষাটি আবার দিতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবারই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। তাতে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাই পর্যন্ত রেজাল্ট সারেন্ডার করতে পারবেন ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথি-সহ প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে সংসদের আঞ্চলিক দফতরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে তাঁদের। তবে রেজাল্ট সারেন্ডার করার পর ওই পরীক্ষার্থী স্পেশাল হিসাবে না কন্টিনিউয়িং হিসাবে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিকে অংশগ্রহণ করতে চান, তা সতর্কভাবে চয়ন করার পরামর্শ দেন সংসদ সভাপতি। সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, ‘স্পেশাল ক্যান্ডিডেট মানে, পরীক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট যে বিষয়ে ফেল করেছেন, শুধুমাত্র সেই বিষয়টিরই পরীক্ষা দেবেন। কন্টিনিউয়িং-এর ক্ষেত্রে ছয়টি বিষয়েরই পরীক্ষা দিতে হবে। অর্থাৎ গোটা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাটিই পুনরায় দিতে হবে তাঁদের।’
বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, রেজাল্ট সারেন্ডার করা পরীক্ষার্থীদের যখন ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিকে অংশগ্রহণের জন্য ফর্ম পূরণ (এনরোলমেন্ট) করা হবে, তখনই সতর্কভাবে পছন্দ করতে হবে স্পেশাল বা কন্টিনিউয়িং অপশনটি। এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের সঠিকপথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে স্কুলগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।