সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা বাতিল করার নির্দেশ আদালতের

কেন গোটা সন্দেশখালি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হল, তা নিয়ে যথার্থ তথ্য দিতে পারল না রাজ্য। ফলে আদালতে বড় ধাক্কা পুলিশের। এরপরই সন্দেশখালিতে জারি হওয়া ১৪৪ ধারা বাতিল করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পরিস্থিতি ভালভাবে ‘টেক কেয়ার’ করতে হবে বলে পুলিশকে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তবে নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু করতে চাইলে আবেদন করতে পারবে রাজ্য।

এরই পাশাপাশি আদালতের পর্যবেক্ষেণ, রাজ্য এমন কোনও নথি রাজ্য দেখাতে পারেনি যার জেরে মানতে হবে গোটা থানা এলাকায় ১৪৪ ধারার প্রয়োগ জরুরি ছিল। উল্লেখ্য, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি এলাকায় উত্তেজনার পারদ চড়তেই সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে রাজ্য় প্রশাসন। আর তাই কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সেখানে ঢুকতে পারছিলেন না। মাঝপথ থেকেই ফিরতে হয়েছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বামনেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়দের। কিন্তু তবে এদিন আদালতের এই নির্দেশের পর কোনও রাজনৈতিক প্রতিনিধির সন্দেশখালিতে প্রবেশে কোন বাধা রইল না।

এদিন শুনানি চলাকালীন বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের মন্তব্য, শাসকদলের বিরুদ্ধে খুব গুরুতর অভিযোগ। মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করা আবার ১৪৪ জারি করে গ্রামের মানুষকে আটকে দেওয়ার কৌশল বড় বিপদ ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট বলেই মত বিচারপতি। তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ করা হয় সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা বা দেশবিরোধী প্রচার আটকানোর জন্য। এখানে কী কারণে সেটা করা হয়েছিল সেটা স্পষ্ট নয়।

এদিকে মঙ্গলবার মামলাকারীদের আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, ‘সন্দেশখালির ঘটনা ব্যতিক্রমী। প্রায় ৩-৪ বছর ধরে অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দিনমজুরের কাজ করিয়ে টাকা দেওয়া হয়নি। গ্রামবাসীরা বলছেন তাঁরা পুলিশের কাছে যেতে পারেন না, বিডিও অফিসে যেতে পারেন না। রাতে মহিলাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে।’ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করলেই পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে আইনজীবীর দাবি, কোন ক্ষেত্রে ১৪৪ ধারা জারি করা যায়, সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ আছে। এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি বলেই দাবি করেন আইনজীবী। এদিকে সন্দেশখালিতে এই উদ্ভুত পরিস্থিতির জেরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। সেই কারফিউ প্রত্যাহার সংক্রান্ত মামলার মঙ্গলবার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেখানে কড়া মন্তব্য বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর। রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি বললেন, ‘এরপর বলবেন, গোটা কলকাতা শহরে টেনশন আছে।তাই গোটা কলকাতাতেও ১৪৪ ধারা।’ বিচারপতি এও বলেন, ‘এটা হালকা করে নেওয়ার বিষয় নয়। এটি অনেক গুরুতর অভিযোগ।’ এদিকে রাজ্যের অবশ্য যুক্তি, সন্দেশখালিতে যাতায়াতে কোনও সমস্যা নেই। তবে পাঁচ জনের বেশি জমায়েতে আপত্তি রয়েছে। রাজ্যের তরফে এ কথাও বলা হয় যে এতজন লোক একসঙ্গে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন, তার যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে কি না, সেটাও আদালতের দেখা উচিত। সঙ্গে মামলাকারী পক্ষে যে মাত্র ২ জন, সেকথাও জানায় আদালত। রাজ্যের বক্তব্য, ‘এই মামলা করেছে দু’জন। দু’জন গোটা এলাকা নিয়ে বলছেন!’

এদিন মামলার শুনানি চলাকালীন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে আবেদন করেন, প্রাথমিকভাবে এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হোক। এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক যে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন, সে কথাও আদালতে তুলে ধরেন তিনি। বিকাশরঞ্জনের বক্তব্য, প্রাক্তন বিধায়কের ভুল ছিল, তিনি মানুষের অধিকার রক্ষার দাবি করছিলেন। এদিকে তাঁর নামে মুরগির খামার পোড়ানোর পুরনো একটি কেস দিয়ে দেওয়া হল। যে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বিরুদ্ধেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে আদালতে জানান বিকাশ। এরপরই বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানতে চান, যে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁরাই তদন্ত করছেন কি না তা নিয়ে। সঙ্গে এও জানতে চান, এঁরাই কি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখছেন? তবে এদিন রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ইতিমধ্যেই ইন্টারনেট পরিষেবা এসে গিয়েছে সেখানে।

এদিকে তিন বছর ধরে যে একটি জায়গায় পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলে শোনা যাচ্ছে, সেই বিষয়টিও এদিন উল্লেখ করেন বিচারপতি। বলেন, ‘মহিলারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। আর আপনারা টেকনিক্যালিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন?’ একইসঙ্গে বিচারপতির সংযোজন, ‘এই মামলায় এমন কিছু পয়েন্ট রয়েছে, যেখান থেকে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − eleven =