প্রেমিকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে স্বামীকে খুনের জন্য সুপারি দিয়েছিলেন স্ত্রী৷ এরপর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে খুনও করা হয় স্বামীকে। তবে প্রকৃত ঘটনা চাপা থাকেনি। পুলিশি তদন্তে সামনে আসে স্ত্রী এবং তার প্রেমিকের এই পরিকল্পনার ঘটনা৷ ২০১২ সালে হুগলির পোলবার বাসিন্দা কৃষ্ণ মালের হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় মঙ্গলবার মৃতের স্ত্রী রিনা মাল সহ সাতজনকে দোষী সাব্যস্ত করল চুঁচুড়া আদালত৷ এই মামলায় যাঁরা সাক্ষ্যদান করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিল রিনাদেবীর নাবালক পুত্র। ছেলের সাক্ষ্য গ্রহণের পর দোষী সাব্যস্ত হল মা সহ বাবাকে যাঁরা খুন করেছে সেই খুনিরাও।
প্রসঙ্গত, পোলবার পাটনা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন কৃষ্ণ এবং রিনা মাল৷ কৃষ্ণর থেকে বয়সে প্রায় কুড়ি বছরের ছোট ছিলেন রিনা৷ তাঁদের একটি ১২ বছরের ছেলেও ছিল৷ কৃষ্ণের সঙ্গে সুখী ছিল না রীনা, এমনটাই জানা গেছে। এরপর হুগলিরই বলাগড়ে বাসিন্দা জিকো পাল নামে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় তার। প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হতেই বলাগড় থেকে পোলবায় যাতায়াত শুরু করে জিকো। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্কে পথের কাঁটা নিজের স্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রিনা। জিকোর সঙ্গে মিলে স্বামী কৃষ্ণ মালকে খুনের ছক করে সে৷ কৃষ্ণকে খুনের জন্য পাঁচ জন দুষ্কৃতিকে সুপারিও দেয় রিনা এবং তার প্রেমিক জিকো। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১২ সালের ২৮ মার্চ রিনা এবং কৃষ্ণর পোলবার বাড়িতে গভীর রাতে হানা দেয় দুষ্কৃতিরা। দরজা খুলে দেয় রিনা নিজেই৷ এরপর গলা কেটে খুন করা হয় কৃষ্ণকে। পুলিশ তদন্তে নামলে রিনা প্রথমে দাবি করে, তাকে এবং তাদের নাবালক ছেলেকে হাত বেঁধে তার স্বামীকে খুন করে গয়না ও টাকা লুঠ করে পালিয়েছে ডাকাত দল। দুষ্কৃতীরা তাকে ধর্ষণ করে বলেও সে সময় অভিযোগ করে রীনা।এদিকে তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই রিনার বয়ানে অসঙ্গতি পায় পুলিশ। এরপরই পুলিশি তদন্তে সামনে আসে রিনার সঙ্গে জিকোর প্রেম, তার স্বামীকে খুনের ছক, সাজানো ডাকাতির পরিকল্পনা– সবই। এরপই এই ঘটনায় জড়িত রিনা মাল, তার প্রেমিক জিকো পাল,দীপঙ্কর পাল, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, লক্ষ্মীকান্ত চক্রবর্তী,অভিজিৎ চক্রবর্তী এবং রাজা দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার এই মামলায় চুঁচুড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায় চৌধুরী জানান, এই মামলায় ১৮ জন সাক্ষ্যদান করেছেন। সাক্ষীদের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিল মৃত কষ্ণ মালের নাবালক ছেলের বয়ান। ধর্ষণের যে অভিযোগ রিনা মাল করেছিল, তা মেডিক্যাল পরীক্ষায় প্রমাণ হয়নি। আজ চুঁচুড়া আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক কৌস্তভ মুখোপাধ্যায় সাতজন অভিযুক্তকেই দোষী সাব্যস্ত করেন। আগামী ২৬ জুলাই হবে এই মামলার সাজা ঘোষণা৷ এদিকে রিনা মাল গত ১৩ বছর ধরেই হুগলি জেলে বন্দি। ঘটনায় অভিযুক্ত চারজন দুষ্কৃতি একবার পুলিশের চোখে লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরেও আবার ধরা পড়ে। অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই এখন বিভিন্ন জেলে বন্দি।