মহিলাদের জন্য আত্মমর্যাদা কেন্দ্র গড়তে চায় সিপিআইএম

লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে শাসকদল তৃণমূল এবং কেন্দ্রের বিজেপিকেও আক্রমণ করতে দেখা গেল সিপিআইএম-কে। সঙ্গে রবিবারের সাংবাদিক বৈঠক থেকে যে বার্তা দেওয়া হল তাতে স্পষ্ট যে নারীদের আত্মমর্যাদা রক্ষাকেই তাঁরা এবার পাখির চোখ করে নিয়েছে। আর এর থেকে এটাও স্পষ্ট যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মহিলা ভোট ব্য়াঙ্ককে কাজে লাগাতে চাইছেন তাঁরা। এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় তাঁর চিরাচরিত স্পষ্ট ভঙ্গিমাতে বার্তা দেন, ‘মহিলাদের মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য, পায়ের তলায় মাটি শক্ত করার লড়াই চলে সারা বছর। লোকসভা ভোটে সেই লড়াইকেই তুলে ধরতে চলেছেন সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা। লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হলে মহিলাদের জন্য সিপিআই(এম) সাংসদরা বিশেষ প্রকল্প নেবেন। সাংসদ তহবিলের এক তৃতীয়াংশ টাকা খরচ হবে মহিলাদের আত্মমর্যাদা, আত্মরক্ষার জন্য।’ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লোকসভা নির্বাচনের মহিলা প্রার্থীরাও। আর এখান থেকেই রবিবারের সাংবাদিক বৈঠকে ওঠে ‘নিজের হক্‌ নিজের ধকে’ স্লোগান।

এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন শ্রীরামপুর কেন্দ্রের প্রার্থী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী দীপ্সিতা ধর, দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম, আসানসোল কেন্দ্রের প্রার্থী এবং মহিলা আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা খান, ঝাড়গ্রামের প্রার্থী সোনামণি টুডু মুর্মু এবং বোলপুরের প্রার্থী এবং সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য শ্যামলী প্রধান।

রবিবার মুজফফ্‌র আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে পরিকল্পনা বিশদে ব্যাখ্যা করেন দীপ্সিতা। তিনি বলেন, ‘শুধু আত্মরক্ষা বললে মহিলাদের ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে দিই। যেন তাঁরা শারীরিক ভাবে দুর্বল বলে নির্যাতিতা। আসলে সমস্যা সামাজিক। তাই আত্মমর্যাদার কথাও বলছি।’ এর পাশাপাশি তিনি এও জানান, বহুচর্চিত ‘নির্ভয়া তহবিল’ থেকে টাকা ব্যবহার ২০১৪’র পর থেকে বন্ধ প্রায়। সাংসদ নির্বাচিত হলে এই তহবিলকে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করবে সিপিআই(এম)। এই প্রসহঙ্গে দীপ্সিতার ব্যাখ্যা, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে আমাদের অসুবিধা নেই।’ তবে প্রশ্ন তোলেন আর্থিক ক্ষমতায়ন নিয়ে। আর এই প্রসঙ্গেই দীপ্সিতার বক্তব্য, যদি ধরেও নেই হচ্ছে, প্রশ্ন হলো সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন আরও কমেছে এগারো সালের পর। যখন কিশোরী নির্যাতিতা হয়ে খুন হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন নাবালিকা মেয়েটির সঙ্গে ধর্ষক ছেলেটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল, অতএব যেন তাকে গণধর্ষণ করে খুন করা যায়।’ আর এখানেই দীপ্সিতার প্রশ্ন,কী ক’রে নাগরিক হিসেবে ক্ষমতায়ন হয় তা নিয়েই।

এই প্রসঙ্গে এদিন দীপ্সিতা এও জানান, সিপিআই(এম)’র পরিকল্পনা। সাংসদ তহবিলের এক তৃতীয়াংশ টাকায় আত্মমর্যাদা কেন্দ্র গড়া হবে। গড়া হবে আত্মরক্ষা সমিতি। যে কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা কর্মী হতে পারেন সমিতির প্রতিনিধি।

আত্মরক্ষা সমিতির কাজ হবে বহুমুখী। আইনি সমস্যায় সহায়তা। মহিলাদের আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। গার্হস্থ্য হিংসায় হেল্পলাইন নম্বর, বেশিভাগই অচল থাকে, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সজীব হেল্পলাইন সযোগ গড়ে তোলার কাজ করতে চায় সিপিআই(এম)। সাংসদের দায়িত্ব সেই লক্ষ্যে ব্যবহার করতে চায়।

পাশাাাপাসি দীপ্সিতা এও বলেন, ‘গণউদ্যোগ গড়া দরকার গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধে। তৈর করা হবে  গণসচেতনতা। নির্যাতিতার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ট্রমা কেয়ার ইউনিট করবে আত্মরক্ষা সমিতি। কোনও না কোনও ভাবে নিগ্রহের শিকার হলে শিকার হলে সারাজীবন ‘ট্রমা’ বয়ে বেড়াতে হয়।’ আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে আত্মরক্ষা কেন্দ্রে। এই প্রসঙ্গে দীপ্সিতার বক্তব্য‘আত্মরক্ষা কেবল শারীরিক শক্তির বিষয় ওপর নয়। সামাজিক শক্তির বিন্যাসে মহিলাদের ক্ষমতায়নের ভরকেন্দ্র থাকে। তবে শাহজাহানরা থাকলে প্রশিক্ষণও থাকা ভালো।’ বাল্য বিবাহ এবং পণপ্রথা আটকাবে আত্মরক্ষা সমিতি। কন্যাশ্রী থাকলেও মেয়েদের কমবয়সে বিয়ে হচ্ছে। কিভাবে বাঁচানো যায় বা তার ভবিষ্যত বা কী, শ্রমজীবী পরিবারের মেয়েদের ভবিষ্যত কী, সরকারি কাজ নেই, বা তা হলেও ঘুষ দিতে হচ্ছে, ভবিষ্যত সম্পর্কে জানে না, জীবিকা রোজগারের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে এই পরিবারের ছাত্রী বা যুবতীদের ধারণা দেওয়ার কাজও করবে আত্মমর্যাদা কেন্দ্র।

এদিকে পরিকল্পনার গুরুত্ব প্রসঙ্গে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় জানান,‘পশ্চিমবঙ্গে বিধায়ক সাংসদদের মধ্যে ২৬ জনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে, মামলা রয়েছ। কোন রাজ্যে, কোন দেশে আমরা থাকছি। হাড়হিম করা সন্ত্রাস আমরা দেখছি। জেলের ভেতর ১৯৬ জন মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে। আমরা কোথায় রয়েছি। আরেকদিকে দেখছি উন্নাও, হাথরসের মতো একের পর এক ঘটনায় বিজেপি’র ভূমিকা।’ আর এরই সূত্র ধরে বঙ্গের দুই বিপদকেই রোখার ডাক দেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =