কোতোয়ালি থানার ওসির বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ, নিন্দায় সরব সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সেলিম থেকে মানবাধিকার সংগঠন

যাদবপুরকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বামপন্থী সংগঠনগুলো। এদিকে সেদিনই মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার লকআপে ঘটে যায় নৃশংস ঘটনা।  প্রতিবাদে সামিল হওয়ায় এআইডিএসও-র মহিলা সদস্যের ওপর সামনে এল অকথ্য অত্যাচারের অভিযোগ। এআইডিএসও-র মহিলা সদস্য জানান, তাঁকে মোমের ছ্যাঁকা দেওয়ার সঙ্গে চুল ধরে শূন্যে উঁচু করে পায়ের তলায় দেওয়া হয় মার। চটুল বলিউডি গান চালিয়ে নাচতে বলে পুলিশ। আর এতে সরব মানবাধিকার সংগঠন থেকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ সুপার।

এআইডিএসও-র মহিলা সদস্যেদের অভিযোগ পায়ে জ্বলন্ত মোমবাতির ছ্যাঁকার সঙ্গে বেল্ট দিয়ে পেটানো, সঙ্গে মুখে বুটের আঘাত, চুল ধরে শূন্যে উঁচু করে পায়ের তলায় আঘাত করা হয়। এছাড়াও মারধরের সময় চালিয়ে দেওয়া হয় চটুল বলিউডি গান, ড্রাগ কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি। প্রত্যেকটি অভিযোগ কোতোয়ালি থানার মহিলা ওসির বিরুদ্ধে। অভিযোগে যা সামনে এসেছে তা যেন সিনেমায় দেখানো অত্যাচারের দৃশ্য!

নিগৃহীত সুশ্রীতা সোরেন জানান, গত ৩ মার্চ আমাদের যে কর্মসূচি ছিল, তা মূলত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হচ্ছিল। কোনও রাস্তা অবরোধ, কিংবা এমন কোনও কাজ করা হয়নি, যাতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পৌঁছানো মাত্রই বিশাল বাহিনী আন্দোলনকারীদের তুলে নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ছাত্রকর্মীদের নামিয়ে চার জন ছাত্রীকে পাটনাবাজারে মহিলা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ ভ্যান থেকে নামিয়ে সিসিটিভি আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। মেঝের মাঝখানে চার জন মুখ থুবড়ে পড়েন। ওই অবস্থাতেই ওসি-সহ পাঁচ জন পুলিশ কর্মী মিলে চড়াও হয়। মারতে থাকে, লাথি, কিল, চড় ঘুষি মারে। সেই সময়ে ওসি কোমরের বেল্ট খুলে মারতে থাকেন।

একইসঙ্গে সুশ্রীতা এও দাবি করেন, এরপর বাকি তিন জনকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য রুমে। তারপর একা তাঁর ওপর চলে অত্যাচার। সঙ্গে হুমকির সুরে বলা হয়, থানার অনেক জায়গা আছে, যেখানে পুঁতে দিলে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। জ্বলন্ত মোম গায়ে ফেসেও অত্যাচার করা হয় শরীরের সেই ক্ষতচিহ্নও দেখান সুশ্রীতা। এরপরের অভিযোগ আরও ভয়ানক। সুশ্রীতাদের এইভাবে মারার পর নাকি স্নান করে ফ্রেশ হয়ে যেতে বলেন ওসি। যাতে শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্ন না থাকে। স্নান করতে না চাওয়ায় অভিভাবকদের আসার আগে জোর করিয়ে স্নান করানো হয়।

নিগৃহীত আরও এক এআইডিএসও কর্মী বর্ণালী নায়ক বলেন, ‘চেয়ারে বসে মুখে বুট দিয়ে লাথি মারা হয়েছে। রক্ত যখন বেরোচ্ছিল, তখন জোর করে জল খাইয়ে দেওয়া হয়।’ অপর এক অভিযোগকারী এআইডিএসও-র জেলা সম্পাদিকা রানুশ্রী বেজ জানান, ‘গাড়ি থেকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গিয়ে চারদিক থেকে ঘিরে লাথি মারে।’ সঙ্গে এও বলা হয়, এমন ভাবে মারব যেন হাঁটতে না পারে। তনুশ্রী দেবী পাশাপাশি এও জানান, জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। শৌচাগারে যেতে দেওয়া হয়নি দীর্ঘক্ষণ। রাত দুটোর সময় আমাদের থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।ওসি বলছিলেন, এমন জায়গায় মারো যেন চিহ্ন না থাকে।’

এই অভিযোগ  সামনে আসতেই মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর বলেন, ‘এটাই পুলিশের আসল রূপ। ভয়ঙ্করভাবে শাসকের দলদাস হিসাবে কাজ করছে। এই ঘটনা মেদিনীপুর নয়, গোটা রাজ্যেই হচ্ছে।’ এ প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘এরকম অসামাজিক জীবকে পুলিশের উর্দি পরিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে অন্যায় আচরণ হয়েছে, বেআইনি। মেদিনীপুরে যা হয়েছে নৃশংস। খ্যাপা কুকুরের মতো তৃণমূল কংগ্রেস পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে।’ এই ঘটনায় পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘এরকম ঘটনার কোনও অবকাশই নেই। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ সিরিয়র অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। মহিলা থানাতেই রাখা ছিল। রাতেই পরিবারের হাতে দিই। কেন এরকম অভিযোগ করছে জানি না। আমি বলব, একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের জেলার নেতৃত্ব এটাকে ইস্যু করার চেষ্টা করছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + twenty =