টেট পরীক্ষা দেওয়ার পর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে যোগাযোগ করতেন কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডলের সঙ্গে, এমনটাই সূত্রে খবর। শুধু তাই নয়, এ খবরও মিলেছে বিরাট অঙ্কের টাকা দিলে তাঁদের নাম পাশ করা প্রার্থীর তালিকায় উঠে যেত। সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের ডাক পেতেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে চাকরি পেয়েছিলেন অনেকে। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাপস মণ্ডল তাঁর ৮ জন এজেন্টের মাধ্যমে ১৪১ জনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন ৪ কোটি ১২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা, আর অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষকে ৫ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তাপস। সিবিআই-এর দাবি, প্রায় একই কায়দায় এবং একই সময়কালে কুন্তল ঘোষও তাঁর তিনজন এজেন্টের মাধ্যমে ৭১ জন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন। তবে কোন তালিকায় উঠত নাম তা নিয়ে সিবিআই তদন্ত করেত নেমে জানিয়েছে,এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল এক ফেক ওয়েবসাইট। সেখানেই নাম দেখতে পেতেন প্রার্থীরা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁদের তৈরি ভুয়ো ওয়েবসাইটটি ছিল www.wbtetresults.com। সেখানে টেটে অকৃতকার্য প্রার্থীরাও হয়ে যেতেন উত্তীর্ণ। একেবারে অবিকল আসল ওয়েবসাইটের মতোই দেখতে ছিল এই ওয়েবসাইট। অযোগ্য চাকরি প্রাপকদের ভুয়ো ইমেইল আইডি থেকে মেইল পাঠিয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হত বলে দাবি সিবিআই-এর। এভাবেই দিনের পর দিন চলছিল একটা চক্র। মঙ্গলবার হাইকোর্টে যে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে জমা দেওযা হয় তাতে এমনটাই জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রাথমিক নিয়োগে কীভাবে দুর্নীতি হয়েছিল, তারই তদন্ত রিপোর্ট এদিন জমা পড়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে। প্রাথমিক দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার রিপোর্টের সঙ্গে পেশ করা হয়েছে চার্জশিটের কপিও।
আদালত সূত্রে খবর, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই-এর হাতে কী তথ্য উঠে এসেছে, তার উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্টে রয়েছে, অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডলের নাম। তাঁদের মধ্যে একটা অশুভ আঁতাত গড়ে ওঠে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এরাই অবৈধভাবে চাকরি পাইয়ে দিয়ে বিপুল অর্থ সংগ্রহের একটা চক্র তৈরি করেছিল। একইসঙ্গে সিবিআইয়ের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, তাপস মণ্ডলের কয়েকজন সাব এজেন্ট ছিলেন। তাঁদের মাধ্যমে মূলত টিচার্স ট্রেনিং কলেজের মালিকদের কাছ থেকে টাকা তোলা হত। শুধু তাই নয়, প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে কুন্তল ও তাপসের পকেটে কোটি কোটি টাকা গিয়েছিল বলে দাবি করেছে সিবিআই। একইসঙ্গে সিবিআইয়ের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালে ৭৫২ জন এমন চাকরি প্রার্থীর একটি তালিকা প্রকাশিত হয় যাঁরা কেউই টেট পাশ করেননি বলে অভিযোগ। আর এই ৭৫২ জনের মধ্যে ৩১০ জনকে চাকরিও দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। অর্থাৎ টাকার সৌজন্য ফেল করলেও মিলত চাকরি, এমনই অভিযোগ উঠছে তাপস-কুন্তলদের বিরুদ্ধে।