ভোট প্রদানের হার কম নিয়ে নানা মুনির নানা মত

এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রথম দফা। আর সপ্তম দফার ভোট ১ জুন। সাত দফার ভোট চলছে প্রায় দেড় মাস ধরে। এপ্রিলের মাঝামাঝি তীব্র গরমে ভোটের শুরু। তবে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ সব জায়গায় এই তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল না। ফলে গরমের ওঠানামার সঙ্গে ভোটের চিত্রের কি ওঠানামা দেখা গিয়েছে প্রথম ছয় দফায়।  আপাতত,  প্রথম পাঁচ দফার ভোটের হার প্রকাশ করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই তথ্য বলছে, বাংলায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে ভোটের হার কমেছে। তবে ভোটের হার কমার কারণ কী তা নিয়ে নানা জনের নানা মত। এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন রাজনৈতিক দলগুলিও।

তবে এটা ঠিক, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ছাপ্পা, রিগিংয়ের অভিযোগ অন্যান্যবারের চেয়ে কম। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া প্রতি দফায় শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, প্রথম পাঁচ দফায় বাংলার যে ২৫টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, সেখানে উনিশের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে ভোটের হার কম।

ভোটের হার কম হওয়ার কারণ নিয়ে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য জানান, ‘অনেক পরিযায়ী শ্রমিক এবার বাড়ি আসতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস অনেক জল মেশায়, এবার সেটা করতে পারেনি। আবার কিছু মানুষ হয়তো মনে মনে বিজেপি বিরোধী, কিন্তু, তৃণমূলকে তাঁরা ভোট দেবেন না বলে ভোটকেন্দ্রে যাননি। আর মানুষ জানে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে।’ তবে এর পাশাপাশি ভোটের হার কম হওয়াকে তাঁরা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ লক্ষণ বলে মনে করেননি বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। এই প্রসঙ্গে তনি বলেন, ‘আমরা চাই, একশো শতাংশ ভোট পড়ুক। কারণ, ভোট না পড়াটা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ লক্ষণ মনে করি না। কিন্তু, ঘটনাচক্রে এটা হয়েছে।’ তবে ভোটের হার কম হওয়ায় শমীকের ধারনা, ‘বিজেপির জয়ের ব্যবধান বাড়বে। আসনও বাড়বে।’

ভোটের হার কম হওয়ার পিছনে বিজেপির হাওয়া না-থাকাই কারণ হিসেবে দেখছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ভোটদানের হার কমে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘উনিশের নির্বাচনে বিজেপির দিকে একটা হাওয়া ছিল। বহু মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। সেজন্য বেশি ভোট পড়েছিল। এবার সেধরনের কোনও হাওয়া নেই। সেই কারণে ভোট শতাংশ কিছু কম হয়েছে।’

তবে ভোটের হার কম হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, এর পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, পরিযায়ী শ্রমিক। যাঁরা এই নির্বাচনে বাড়ি আসতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, ভয়াবহ তাপপ্রবাহ। সেই কারণে ভোটদাতাদের একটা বিরাট অংশই ভোটদান থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। পাশাপাশি অনেকেও আবার ভোট দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে কম ভোট পড়ার লাভ ঠিক কারা তুলতে পারেবন সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন কেউই।

 

উনিশ ও চব্বিশের নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার শতাংশেঃ

নির্বাচন লোকসভা কেন্দ্র মোট ভোটার প্রদত্ত ভোট ভোটদানের হার
২০১৯ আলিপুরদুয়ার ১৬,৪৩,৬১৬ ১৩,৫৪,৭৫৮ ৮৩.৫ শতাংশ
২০২৪ আলিপুরদুয়ার ১৭,৭৩,২৫২ ১৪,১৪,২৫৮ ৭৯.৭৬ শতাংশ
২০১৯ কোচবিহার ১৮,১০,৬৬০ ১৫,০৫,৮৮২ ৮৩.৮ শতাংশ
২০২৪ কোচবিহার ১৯,৬৬,৮৯৩ ১৬,১৬,০৭৯ ৮২.১৬ শতাংশ
২০১৯ জলপাইগুড়ি ১৭,৩১,৮৩৪ ১৪,৭৭,৮০২ ৮৬.৩ শতাংশ
২০২৪ জলপাইগুড়ি ১৮,৮৫,৯৬৩ ১৫,৭৭,৮২৮ ৮৩.৬৬ শতাংশ
২০১৯ বালুরঘাট ১৪,২৯,৭৮৩ ১১,৮১,৯৩৭ ৮৩.৫ শতাংশ
২০২৪ বালুরঘাট ১৫,৬১,৯৬৬ ১২,৩৫,৩৪৭ ৭৯.০৯ শতাংশ
২০১৯ দার্জিলিং ১৬,০০,৫৬৪ ১২,৪৯,৫৬৪ ৭৮.২ শতাংশ
২০২৪ দার্জিলিং ১৭,৬৫,৭৪৪ ১৩,২০,০৭২ ৭৪.৭৬ শতাংশ
২০১৯ রায়গঞ্জ ১৫,৯৯,৯৪৮ ১২, ৫৮,৮১০ ৭৯.৫ শতাংশ
২০২৪ রায়গঞ্জ ১৭,৯০,২৪৫ ১৩,৬৩,৮৫৪ ৭৬.১৮ শতাংশ
২০১৯ জঙ্গিপুর ১৬,১৪,০৮১ ১২,৯১,৫৬৭ ৮০.৬ শতাংশ
২০২৪ জঙ্গিপুর ১৮,০৫,৩৬০ ১৩,৬৭,০১৪ ৭৫.৭২ শতাংশ
২০১৯ মালদা দক্ষিণ ১৫,৭৩,৪৩৩ ১২,৬৩,৩৫৫ ৮০.৯ শতাংশ
২০২৪ মালদা দক্ষিণ ১৭,৮২,১৫৯ ১৩,৬৬,৭২৮ ৭৬.৬৯ শতাংশ
২০১৯ মালদা উত্তর ১৬,৮৩,৭৯৭ ১৩,৪৩,৮০২ ৮০.২ শতাংশ
২০২৪ মালদা উত্তর ১৮,৬২,০৩৫ ১৪,১৫,৭১৮ ৭৬.০৩ শতাংশ
২০১৯ মুর্শিদাবাদ ১৭,২২,৭৫২ ১৪,৩৬,৯৭১ ৮৪.২ শতাংশ
২০২৪ মুর্শিদাবাদ ১৮,৮৮,০৯৭ ১৫,৩৯,১১২ ৮১.৫২ শতাংশ
২০১৯ আসানসোল ১৬,১৪,৯১৭ ১২,২২,৮০০ ৭৬.৬ শতাংশ
২০২৪ আসানসোল ১৭,৭০,২৮১ ১২,৯৭,০৯৬ ৭৩.২৭ শতাংশ
২০১৯ বহরমপুর ১৬,৩২,০৮৭  ১২,৮১,৯৮৫  ৭৯.১ শতাংশ
২০২৪ বহরমপুর ১৭,৮৩,০৭৮ ১৩,৮২,৬৭৮ ৭৭.৫৪ শতাংশ
২০১৯ বর্ধমান পূর্ব ১৬,৯৬৫২৮ ১৪,২৭,১১৭ ৮৪.৭ শতাংশ
২০২৪ বর্ধমান পূর্ব ১৮,০১,৩৩৩ ১৪,৯২,৪৫৩ ৮২.৮৫ শতাংশ
২০১৯ বর্ধমান-দুর্গাপুর ১৭,৩২,৪৩১ ১৪,১২,৯৪৯ ৮২.৬ শতাংশ
২০২৪ বর্ধমান-দুর্গাপুর ১৮,৫১,৭৮০ ১৪,৯৪,৭৭৮ ৮০.৭২ শতাংশ
২০১৯ বীরভূম ১৬,৯৬,৮৫১ ১৪,৩৪,৮১৬ ৮৫.২ শতাংশ
২০২৪ বীরভূম ১৮,৫৭,০২২ ১৫,২১,০২৩ ৮১.৯১ শতাংশ
২০১৯ বোলপুর ১৭,০২,৩৬৬ ১৪,৪৬,৬৮৪ ৮৫.৬ শতাংশ
২০২৪ বোলপুর ১৮,৩৯,২৩৪ ১৫,২০,৪০১ ৮২.৬৬ শতাংশ
২০১৯ কৃষ্ণনগর ১৬,২৪,৮৬৬ ১৩,৫৩,৮৪৭ ৮৩.৪ শতাংশ
২০২৪ কৃষ্ণনগর ১৭,৫৫,৬৩১ ১৪,১৫,৮৫৯ ৮০.৬৫ শতাংশ
২০১৯ রানাঘাট ১৭,৫৬,৪৪৫ ১৪,৬৯,৮৪৪ ৮৩.৯ শতাংশ
২০২৪ রানাঘাট ১৮,৭১,৬৫৮ ১৫,৩২,৩০৪ ৮১.৮৭ শতাংশ
২০১৯ আরামবাগ ১৭,৬২,৯৯৫ ১৪,৪৯,৯৪৮ ৮৩.৩ শতাংশ
২০২৪ আরামবাগ ১৮,৮৩,২৬৬ ১৫,৫৫,৮৮২ ৮২.৬২ শতাংশ
২০১৯ বনগাঁ ১৬,৯৯,৭৬৩ ১৩,৯৬,৯৫৩ ৮২.৪ শতাংশ
২০২৪ বনগাঁ ১৮,৩৬,৩৭৪ ১৪,৮৮,২০৯ ৮১.০৪ শতাংশ
২০১৯ ব্যারাকপুর ১৪,৩৩,২৭৬ ১০,৮৯,৮৫৬ ৭৬.৮ শতাংশ
২০২৪ ব্যারাকপুর ১৫,০৮,৭২৮ ১১,৩৭,৭৬৩ ৭৫.৪১ শতাংশ
২০১৯ হুগলি ১৭,৬৪,৬২৯ ১৪,৪১,৯৭০ ৮২.৪ শতাংশ
২০২৪ হুগলি ১৮,৫৮,০৬৭ ১৫,১২,০৬০ ৮১.৩৮ শতাংশ
২০১৯ হাওড়া ১৬,৩৩,২০১ ১২,১৫,০৩৪ ৭৪.৮ শতাংশ
২০২৪ হাওড়া ১৭,৬৯,১৮৪ ১২,৬৯,০৭৯ ৭১.৭৩ শতাংশ
২০১৯ শ্রীরামপুর ১৭,৮৩,৯৮৬ ১৩,৭৯,৫৫৬ ৭৮.৪ শতাংশ
২০২৪ শ্রীরামপুর ১৯,২৬,৬৪৫ ১৪,৭২,৭৯৩ ৭৬.৪৪ শতাংশ
২০১৯ উলুবেড়িয়া ১৬,২২,৬৩৯ ১৩,০০,৬২২ ৮১.১ শতাংশ
২০২৪ উলুবেড়িয়া ১৭,৪১,৪৩৮ ১৩,৮৯,৩১৬ ৭৯.৭৮ শতাংশ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − five =