কলকাতার আকাশে ড্রোন, রহস্য় উদ্ঘাটনে  সেনা ও কলকাতা পুলিশ

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে দেশের আকাশে ড্রোন দেখা কার্যত অভ্যাস হয়ে গেছিল। কারণ পাক সেনা লাগাতার ড্রোন হামলা করেছিল ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। যদিও দেশের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ধ্বংস করে। বর্তমানে অবশ্য যুদ্ধবিরতি হয়েছে, আর ড্রোন হামলাও হচ্ছে না। তবে কলকাতার আকাশে ফের দেখা মেলে একঝাঁক ড্রোনের। আর তাতেই কপালে ভাঁজ সেনা থেকে কলকাতা পুলিশ প্রশাসনের প্রত্য়েকেরই।
সোমবার রাতে পৌনে দশটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ মিনিট কলকাতার আকাশে দেখা মেলে অজানা ড্রোনের। স্থানীয় সূত্রে খবর, মহেশতলা ও বেহালার দিক থেকে সাতটি রহস্যময় ড্রোন আসতে দেখা যায়। ভবানীপুর থেকে শুরু করে ময়দান, রবীন্দ্র সদন সহ বিভিন্ন জায়গা মিলিয়ে কমপক্ষে ৪টি ড্রোনের দেখা মেলে। আশপাশে দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও ফোর্ট উইলিয়ামের মতো জায়গা রয়েছে। দুই রাষ্ট্রের যেখানে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি, সেখানে এই ড্রোন ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই রহস্য দানা বাঁধে।
এদিকে ময়দানের বিস্তীর্ণ এলাকা সেনার অধীনে। সেক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গেও কথা বলে। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই মহেশতলা ও বেহালার দিক থেকে দেখা গিয়েছে, আকাশে অদ্ভুত আলো। সাধারণত এই আলো আকাশে দেখতে পাওয়া যায় না। আর তা নজর এড়ায়নি সেনাবাহিনীর কর্মী-আধিকারিকদেরও। এরপরই
কলকাতা পুলিশের কর্তব্যরত আধিকারিকরা লালবাজার কন্ট্রোলে ফোন করেন। লালবাজার থেকে নির্দিষ্ট করে বেশ কিছু থানাকে জানানো হয়। তারপর থানার আধিকারিকরা বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেন। রাতে দৃশ্যমানতা কম থাকায়, বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে বোঝা সম্ভব হয়নি। তবে ড্রোনের গতিতেই বস্তগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। বহুতলের পিছন থেকে চলে গিয়েছে আলো। যেহেতু ওই উড়ন্ত বস্তুগলি সম্পর্কে সম্য়ক কোনও ধারনা তৈরি করা সম্ভব হয়নি তাই ওইগুলো আদৌ ড্রোন নাকি অন্য কিছু তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, বিষয়টি জানার পর ইস্টার্ন কম‍্যান্ড ফোর্ট উইলিয়মে যোগাযোগ করা হয়৷ সেনার তরফে কোনও মহড়া চলছিল কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেনার তরফে জানানো হয়, এমন কোনও মহড়া হয়নি। এরপরেই সেনা সূত্রে জারি করা হয় এক বিবৃতি৷ বিবৃতিতে বলা হয়,‘সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে আমরা কলকাতার আকাশে কিছু ড্রোন দেখতে পাওয়ার গিয়েছে৷ আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দেখছি৷ খুব তাড়াতাড়িই আমরা বিষয়টি নিয়ে জানাব৷ ততক্ষণ অনুরোধ, কোনও রকমের জল্পনা বা গুজব না ছড়াতে আবেদন জানাচ্ছি৷ সরকারি তথ্য পাওয়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’এরপরই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় লালবাজারের তরফে। এর পাশাপাশি সেনা ও পুলিশের তরফ থেকে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়, কী উদ্দেশ্যে ওড়ানো হচ্ছিল এই ড্রোন বা হঠাৎ হেস্টিংসের মতো সেনা এলাকার উপর দিয়েই বা কেন ওড়ানো হয় এগুলো তা নিয়েও।
এদিকে সূত্রে খবর, সেনা, বায়ুসেনা, কলকাতা পুলিশ মিলিতভাবে এই ড্রোন-রহস্যের তদন্তে নেমেছে। তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, মেটিয়াবুরুজ বা বজবজ এলাকা থেকে সেগুলি উড়তে পারে। তবে কেউ ব্যক্তিগত কাজে বা কর্মসূত্রে সেই ড্রোন উড়িয়েছে নাকি এর পিছনে রয়েছে নাশকতা, সে বিষয়টি আগে নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। এমনিতে ফোর্ট উইলিয়াম অঞ্চলে ড্রোন ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর আগে এমন এক ঘটনায় এক বিদেশি নাগরিককে আটকও করছিল পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + sixteen =