বাঁধ থেকে জল ছাড়া ইস্যুতে বছর খানেক আগে এক বেনজির সংঘাতে জড়াতে দেখা গিয়েছিল ডিভিসি এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য় সরকারকে। শুধু তাই নয়, ডিভিসির ছাড়া জলে বাংলার বড় একাট অংশ জলমগ্ন হতেই ডিভিসির সঙ্গে কার্যত সব সম্পর্ক ছিন্ন করার পথে হাঁটতেও দেখা যায় রাজ্য় সরকারকে। এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, ‘বৃষ্টির জন্য বন্যা হয়নি। আমি ডিভিসির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সব সম্পর্ক কাট অফ করবই।’ এরপরই ডিভিসি থেকে পদত্যাগও করেন বাংলার দুই প্রতিনিধি। এই সংঘাতের পর এক বছর কাটতে বা কাটতেই ফের বৈঠকে রাজ্য-ডিভিসি।
এই বৈঠকে ডিভিসির চেয়ারম্যান সুদেশ কুমারের সঙ্গে ছিলেন সেচ ও জলসম্পদ মন্ত্রী ভূঁইঞাও। তবে এর আগে গত ২৬ এপ্রিলও মুখ্যসচিবের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে বলে জানান ডিভিসির চেয়ারম্যান। ২৯ মে ডিভিসি, ডিভিআরআরসি, সেচ ও জল সম্পদ দপ্তর, আবহাওয়া দপ্তর, কেন্দ্রীয় জল কমিশন, ফারাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্ট অথরিটি সঙ্গেও বৈঠক হয়। বন্যা এড়াতে কোন পরিস্থিতিতে জল ছাড়া যাবে, কীভাবে সমন্বয় রাখা হবে তা নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয় বলে খবর। তবে এবারও জল ছাড়া নিয়ে অশনি সঙ্কেত দিয়েই রাখল ডিভিসি। ডিভিসির সাফ কথা,’রাজ্য সরকার ডিভিসির কাছে আবেদন করেছে, একবারে ৫০ হাজার কিউসেকের বেশি জল না ছাড়ার জন্য। আমরা সেটা চেষ্টা করছি। গতবার থেকেই আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, যেভাবে শেষ পর্যায়ে এসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে তাতে ৫০ হাজার কিউসেকের মধ্যে জল ছাড়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে কিনা সেটা আলোচনার বিষয়।’ একইসঙ্গে মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুর অবস্থার কথা মনে করিয়ে ডিভিসির চেয়ারম্যান জানান,’শেষ পর্যায়ে ওখানকার যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি হয় তাহলে জল ছাড়তেই হবে।’
বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, বিভিন্ন ড্যাম এবং ব্যারেজ থেকে জল ধারণ ক্ষমতা এবং জল ছাড়ার ক্ষমতা সেই সংক্রান্ত তথ্য, বন্যার অনুকূল পরিস্থিতি এই সমস্ত কিছু নিয়ে কাজ করতেই এই কোঅর্ডিশন বৈঠক হয়েছে বলে জানান সেচমন্ত্রীও। গত বছরের সঙ্কটজনক পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর না জানিয়ে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছিল ডিভিসি। আর তাই এবার সেন্ট্রালাইজড ইনফরমেশন সিস্টেম চালু করতে চলেছে রাজ্যের শেষ ও জল সম্পদ দফতর। একইসঙ্গে ডিভিসিকে অনুরোধ করা হয়েছে তথ্য সংক্রান্ত যাতে কোন গ্যাপ তৈরি না হয় এবং প্রতিনিয়ত সেই বিষয়ে যেন রাজ্য সরকার তথ্য পায় সে বিষয়ে।’
এর আগে ডিভিসির ধারণ ক্ষমতা কমার পিছনে পলি জমা নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে রাজ্যকে। এবার সেই দাবি কিছুটা মেনে নেয় ডিভিসি। ডিভিসির চেয়ারম্যান জানা্ন, সঠিকভাবে পলি উত্তোলন না করায় ডিভিসির নিয়ন্ত্রণে থাকা চারটি বাঁধের জল ধারণ ক্ষমতা ৩৪-৩৬ শতাংশ কমে গিয়েছে। তবে ঝাড়খণ্ড প্রশাসনের সঙ্গে এই পলি উত্তোলন নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে বলেও জানান তিনি। যদিও মানস বলছেন, পলি তুলে জলের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার কথা তাঁরা এবারও বলেছেন। ইতিবাচক আশ্বাসও মিলেছে।