সফল হল না পূর্ব ভারতের প্রথম হাত প্রতিস্থাপন। দাতার হাত ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারছে না গ্রহীতার শরীর। সেই কারণেই মঙ্গলবার রাতে এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন ওই গ্রহীতা যুবকের ডান হাত বাদ দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা। এরপর বুধবার চিকিৎসকরা জানান, বাঁ হাতের অবস্থাও ভালো নয়।
এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে দু’-একটি প্রতিস্থাপনের নজির সব জায়গায় সব অঙ্গের ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হতে পারে। এতে হতাশার কিছু নেই। তবে অন্যান্য অঙ্গ গ্রহীতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। লিভার ও দুই কিডনির গ্রহীতা তিন জন এখনও এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। আর হৃদযন্ত্রের গ্রহীতা এ দিনই ছুটি পেয়েছেন হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বাকি তিন জনেও ছুটি পাবেন কয়েক দিনের মধ্যে।
গত ১৪ জুলাই এসএসকেএমে ব্রেন ডেথ হয় পথদুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম উলুবেড়িয়ার রাজপুর করাতবেড়িয়ার বাসিন্দা বছর ৪৩-এর হরিপদ রানার। তাঁর পরিবার মরণোত্তর অঙ্গদানে সম্মত হয়। কারণ, উলুবেড়িয়ার হরিপদ রানার ব্রেন ডেথের পর তাঁর স্ত্রীর ইচ্ছা ছিল, আর পাঁচটা অঙ্গের মতো তাঁর স্বামীর মরণোত্তর হাত দু’টিও জীবন্ত থাকুক অন্য কারও শরীরে। কিন্তু হাত দান করলে যেহেতু তা দৃশ্যতই বোঝা যাবে শবদেহ দেখলে, তাই হাত প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে নিমরাজি ছিলেন পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই। ঠিক তখনই মৃতের স্ত্রী যমুনা রানা এগিয়ে এসে হাত দানে সম্মতি দেন। জানান, মৃত স্বামীর অঙ্গে অন্য কেউ যদি নতুন ভাবে বাঁচেন, তা হলে স্বামীর আত্মাই শান্তি পাবে। সেই সূত্রেই অনন্য নজির স্থাপিত হয় এসএসকএমে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, সেই হাতই বাঁচানো গেল না।
এসএসকএমের চিকিৎসকরা জানান, হাত এমনিতেই সবচেয়ে জটিল প্রতিস্থাপন। কিডনি বা লিভার অথবা হার্টের ক্ষেত্রে সাফল্যের হার যেখানে ৭০-৯০ শতাংশ, সেখানে হাত প্রতিস্থাপনে সাফল্যের সম্ভাবনা খুব বেশি হলে ২০ শতাংশ। কেননা, গ্রহীতার শরীরের ইমিউনিটিই নতুন অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান করে। চিকিৎসার পরিভাষায়, হাইপার-অ্যাকিউট অ্যান্টিবডি মিডিয়েটেড রিজেকশন।
বিরাটির গ্রহীতা যুবকের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হয়েছে। ফলে ডান হাতটি মঙ্গলবার বাদ দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাঁ হাতের অবস্থাও ভালো নয়। বেঁচে থাকা অবস্থায় হরিপদর ওই বাঁ হাতে যেহেতু লাগাতার স্যালাইন চলেছিল, তাই ওই হাতটির শিরাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত গোড়া থেকেই।