আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডে ফের সক্রিয় ইডি। প্রতারণার অভিযোগে বারবার শিরোনামে আসা প্রয়াগ চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। এই চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে কয়েকশো কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কলকাতা এবং এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায়।
ইডি আধিকারিকরা মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর এলাকার সাহাপুর কলোনিতে অভিযান চালান। এখানে প্রয়াগ চিটফান্ড গোষ্ঠীর অন্যতম দুই ডিরেক্টর, বাসুদেব বাগচি এবং তাঁর ছেলে অভীক বাগচির ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়। এই ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ফ্ল্যাটে তল্লাশির পাশাপাশি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জোকা এলাকায় ডায়মন্ড হারবার রোডের পাশে একটি রিসর্টে অভিযান চালানো হয়। এটি ছাড়াও বেহালা ও আরও দু’টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রয়াগ গোষ্ঠীর কর্ণধার বাসুদেব বাগচি এবং তাঁর ছেলে অভীক বাগচিকে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন গ্রেফতার করে। চিটফান্ড ব্যবসার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা প্রতারণার অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, হাজার হাজার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মূলত নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার মাধ্যমে ঘটে, যারা মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ লগ্নি করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রয়াগ গোষ্ঠীও এই কৌশলে প্রতারণা চালায়। সংস্থাটি উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখা যায়, লগ্নিকারীদের টাকার কোনো সঠিক হদিস নেই। ২০১৭ সালে সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি, ইডি এই চিটফান্ড কেলেঙ্কারির আর্থিক দিকটি তদন্ত করার দায়িত্ব পায়। তদন্তে জানা যায়, প্রয়াগ গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ টাকা সঠিকভাবে বিনিয়োগ না করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ইডি-র সাম্প্রতিক তল্লাশি মূলত এই টাকার উৎস এবং কোথায় কোথায় তা ব্যয়িত হয়েছে, সেই তথ্য বের করতেই পরিচালিত হচ্ছে।
ইডি-র সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবারের তল্লাশি অভিযান থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। এই নথি থেকে অর্থ লেনদেনের বিভিন্ন তথ্য, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ এবং সংস্থার অন্যান্য লেনদেনের খতিয়ান পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা প্রয়াগ গোষ্ঠীর সম্পদ এবং অর্থের উৎস চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়াও, এই চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে আর কারা জড়িত, তাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। বাসুদেব বাগচি এবং অভীক বাগচির বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা এবং বেআইনি অর্থ সংগ্রহের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা বিপুল পরিমাণ টাকা বেআইনিভাবে আত্মসাৎ করেছেন। তাঁরা উচ্চ মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে সেই অর্থ নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য ব্যয় করেছেন।