লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের তথ্য় খুঁজে বার করতে মরিয়া ইডি

গত সোমবার রাতভর তল্লাশি চালানো হয় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নামে এক সংস্থার অফিসে। সোমবার সকালে ইডির তিনটি দল সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, এমন পৃথক তিনটি জায়গায় তল্লাশি শুরু করে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে একটি প্রকল্প এলাকায় যান ইডির আধিকারিকেরা। পাশাপাশি, লি রোডে সুজয়কৃষ্ণের মেয়ে এবং জামাইয়ের ফ্ল্যাটেও যান ইডির আধিকারিকেরা। একইসঙ্গে আলিপুরে লিপ‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের দফতরেও যান তাঁরা। একযোগে তিন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। বিষ্ণুপুর এবং লি রোডে তল্লাশির কাজ শেষ হলেও আলিপুরের অফিসে তল্লাশি গড়ায় ভোর পর্যন্ত। ইডি সূত্রে খবর, প্রায় ১৮ ঘণ্টার তল্লাশিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের হাতে আসে একগুচ্ছ নথি। একইসঙ্গে তাঁরা হদিশ পান হার্ড ডিস্কেরও। আপাতত সেই সব নথি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ইডি সূত্রে খবর। পাশাপাশি ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, ওই সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। কার নামে ওই অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সে সব নথি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

সোমবারের তল্লাশির পর ইডির তরফ থেকে জানানো হয়, মোট দুটি হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে কোনও তথ্য মেলে কি না তারই চেষ্টা চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিকে দিয়ে সব তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। এদিকে ইডি সূত্রে খবর, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নামে ওই সংস্থার মোট পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ২০১২ সাল থেকে ওই সব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কী কী লেনদেন হয়েছে, সেই হিসেব বের করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কাছে স্টেটমেন্ট চাওয়া হচ্ছে। ওইসব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কেওয়াইসি কার নামে রয়েছে, সেটাও জানতে চাওয়া হবে ব্যাঙ্কের কাছে। আরও দেখা হচ্ছে, ওই সংস্থার সিইও পদে কারা, কোন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন? সংস্থায় থাকাকালীন তাঁদের কী কী কাজ ছিল। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, এই লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থায় উচ্চ পদে চাকরি করতেন সুজয়কৃষ্ণ। আবার তাঁরই সংস্থা এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গেও ওই সংস্থার লেনদেনের প্রমাণ গোয়েন্দারা পেয়েছেন বলে দাবি।

এদিকে ইডি সূত্রে এ খবরও মিলেছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার তলব করা হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দফতরে। সংস্থার দফতরে তল্লাশি চালানোর পর এই চন্দনের মোবাইল-ই বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ।

এদিকে শুক্রবার লালবাজারে গিয়ে ইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন চন্দন। জানান, ইডি তল্লাশি করে যাওয়ার পর সংস্থার কম্পিউটারে ১৬টি ‘অচেনা’ ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোমবারে টানা ১৮ ঘণ্টা তল্লাশি অভিযানের পর লিখিত বিবৃতিতে ইডির দাবি, ‘লিপ‌স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে লেখা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক। যদিও ডায়মন্ড হারবারের দু’বারের সাংসদ অভিষেকের ২০১৪ বা ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার সময়ে নির্বাচন কমিশনে জমা-দেওয়া হলফনামা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, তাঁর ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনও তথ্য নেই। ২০১৪ সালের হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘লিপ‌স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থার ১০ টাকা মূল্যের এক হাজারটি শেয়ার রয়েছে তাঁর। ২০১৯ সালে সে কথা নেই।

এদিকে ইডি চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ২০২০-২১ সালের মধ্যে সুজয়কৃষ্ণকে এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডসের ৯৫ লক্ষ এক হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। কবে, কত টাকা লেনদেন, তা-ও চার্জশিটে জানিয়েছে ইডি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 4 =