নতুন বছরের প্রথম দিনেই যেন তেড়েফুঁড়ে ফেরে ‘অ্যাকশনে’ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। গোটা রাজ্যবাসী যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে নববর্ষ উদযাপনে,ঠিক তখনই জালিয়াতদের টিঁকি খুঁজতে মাঠে নেমে পড়লেন কেন্দ্রীয় তদন্তাকীর সংস্থার আধিকারিকেরা। সূত্রে খবর, ভবানীপুর থানায় দায়ের হওয়া পাসপোর্ট জালিয়াতি মামলায় ফের একবার তল্লাশি অভিযানে এদিন নামেন তদন্তকারীরা।
এদিকে ইডি সূত্রে খবর,মঙ্গলবার সাতসকালে বিরাটি, বেকবাগান-সহ কলকাতা তথা রাজ্যের মোট ৮টি জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে করে তল্লাশি অভিযানে নামে তারা। কীভাবে রাজ্য জুড়ে হুড়মুড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়ো পাসপোর্ট আর তা কারা ছড়াচ্ছে,সেই সব খতিয়ে দেখতে অ্যাকশনে নামেন তাঁরা। সূত্রের খবর, এই ভুয়ো পাসপোর্ট মামলায় আন্তর্জাতিক যোগসাজোশ রয়েছে বলেও মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকেরা। পাশাপাশি, বেশ কিছু নথির খবর পেয়েছে তারা, যা খুঁজে বের করতেই রাজ্যের নানা জায়গায়এদিন খানা তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকরা। ইডির তরফ থেকে এই আন্তর্জাতিক যোগসাজোশের ব্যাপারে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তাতে সিলমোহর দিয়েছে কলকাতা পুলিশও।
এদিকে সম্প্রতি ভবানীপুর থানা তরফে ভুয়ো পাসপোর্ট মামলায় একটি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। গত মাসে ভবানীপুর থানার তরফে মামলার চার্জশিট পেশ করা হয়। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ১৩০ জন। এদের মধ্যে ১২০ জনই বাংলাদেশি নাগরিক, যারা নকল নথি জমা দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট নোটিস’ও জারি করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরবর্তীতে এই মামলার তদন্তভার নেয় ইডি এবং এবার তারা আরও সক্রিয়ভাবে তদন্ত শুরু করেছে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গায় হানা দিয়ে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সংস্থার আধিকারিকেরা।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম জাল পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির অভিযোগ দায়ের হয় ভবানীপুর থানায়। আঞ্চলিক পাসপোর্ট দপ্তরের তরফে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে পাসপোর্ট তৈরির একটি বড় চক্রের কথা। যেখানে মামলায় প্রাথমিকভাবে ৩৭ জনের নাম উঠে আসে। অভিযোগ, অভিযুক্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জাল নথি জমা দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করতেন। এরপর বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে পুলিশ।
তারপর একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। মামলায় পুলিশ মোট দশজনকে গ্রেফতার করে, যাদের মধ্যে একজন প্রাক্তন পুলিশকর্মী, সঙ্গে ডাক বিভাগের দুই কর্মী রয়েছেন। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন রিপন বিশ্বাস, দীপক মণ্ডল, সমরেশ বিশ্বাস এবং দীপঙ্কর দাস-সহ কয়েকজনকে। অভিযানে উদ্ধার হয় একাধিক কম্পিউটার, ভুয়ো ব্যাঙ্কের নথি, ৩৬টি পাসপোর্টের কপি এবং ভিসা।
এরপরই জানা যায়,রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে এই চক্রের জাল। তবে এই তদন্তের মাঝপথে এই মামলার তদন্তভার কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি চলে যায় ইডির কাঁধে। মূলত, ভুয়ো পাসপোর্টের মাধ্যমে চলা আর্থিক জালিয়াতির মামলাগুলির তদন্তভার পায় তারা।