২০২৩-এ বঙ্গের নির্বাচনী চিত্র

২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মৃত্যু হল একাধিক মানুষের। অবাধ সন্ত্রাস, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মামলা, বিরোধীদের ঝুড়ি ভর্তি অভিযোগ এবং সর্বোপরি রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকা এই নিয়ে ২০২৩-এর ভোটচিত্র।

গোটা রাজ্যের জন্য ত্রিস্তরীয় এবং দার্জিলিং ও কালিম্পঙ জেলার জন্য দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয় ৮ জুলাই। তবে নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, হানাহানিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলার একাধিক জেলা। মনোনয়ন জমায় বাধা ও বলপূর্বক প্রত্যাহারের অভিযোগ উঠেছে বারবার। জেলা পরিষদের ৯২৮টি আসন, ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ৭৩০টি আসন, ৩৩১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩ হাজার ২৮৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়।

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে কমিশনার রাজীব

২৮ মে রাজ্যের প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার নামের প্রস্তাব রাজভবনে পাঠায় নবান্ন। নির্বাচন কমিশনার নিয়ে রাজ্য-রাজভবন দড়ি টানাটানি চলে একপ্রস্থ। ৭ জুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাজীব সিনহার নামে সিলমোহর দেয় রাজভবন। তবে কমিশনার হওয়ার পরেই বিরোধীদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন নতুন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের হানাহানির পরেও মোটের উপর নির্বিঘ্নে ভোট করার ব্যাপারে কমিশনারের দাবি নিয়েও তৈরি হয় বিতর্ক।

ভরসার নাম কেন্দ্রীয় বাহিনী

নির্বাচন কমিশনের উপর ভরসা না করতে পেরে আদালতের দ্বারস্থ হন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। কেন্দ্রের কাছে ৮০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে পাঠায় রাজ্য। বদলে শেষমেষ ৩১৫ কোম্পানি মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোটের সিদ্ধান্ত হয়।

লাগামছাড়া হিংসা

বোমাবাজি, ছাপ্পা, বুথ দখল, বিরোধীদের বাধা প্রদান, কোনও কিছুই বাদ যায়নি ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট পর্বে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ভোট সন্ত্রাসে মৃত্যু হয় ১২ জনের। আগে পড়ে মিলিয়ে ভোটের হিংসার কারণে ৩৯ জন বঙ্গবাসী প্রাণ হারান।

ব্যালট ভক্ষণ

২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নজির হয়ে থাকবে ব্যালট ভক্ষণ। গণনা চলাকালীন উত্তর ২৪ পরগনায় হাবড়ার একটি গণনা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটির বিরুদ্ধে ব্যালট পেপার গিলে খেয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সিপিএম প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মজুমদার অভিযোগ তোলেন। এই ঘটনা ভোটের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে জানান অনেকে।

নিরঙ্কুশ জয় তৃণমূলের

ভোটের ফলাফল বাংলায় ফের সবুজ ঝড়ের চিত্র তুলে ধরে। উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। জেলা পরিষদ থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত তিনটি স্তরেই তৃণমূলের ধারেকাছে আসতে পারেনি বিরোধীরা। সব কয়টি জেলা পরিষদ আসন দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৬,৫৬০টি আসন, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৩৫,৬৯৬টি আসন যেতে শাসক দল। অনেকটা পিছিয়ে জেলা পরিষদের ১৭টি আসনে, পঞ্চায়েত সমিতির ৪৫৯টি আসনে, গ্রাম পঞ্চায়েত ৬,৮৮২টি আসনে যেতে সিপিএম, কংগ্রেস, আইএসএফ জোট। বিজেপি পঞ্চায়েত সমিতির ১,০৪৪টি আসন, গ্রামের ৯,৭৫৬টি আসন জেতে বিজেপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + thirteen =