লর্ডসে বাজবল উধাও ইংল্যান্ডের

হেডিংলেতে হারলেও এজবাস্টনে জিতে দুরন্ত কামব্যাক করেছে ভারতীয় দল। এখন দুই দলেরই লক্ষ্য লর্ডস টেস্টে জিতে সিরিজ লিড নেওয়া। প্রথম একাদশে দুদলেরই একটাটা করে পরিবর্তন।  ৪ বছর পরে জাতীয় দলে কামব্যাক করেছেন তারকা পেসার জোফ্রা আর্চার। অন্যদিকে ভারতীয় দলেও ফিরছেন জশপ্রীত বুমরা। লর্ডসে গ্রিন টপ উইকেটে। সঙ্গে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া। পিচে রয়েচে অসমান বাউন্সও। তাই দুই দলই ভরসা রেখেছে তাদের পেস অস্ত্রের উপরে। সব মিলিয়ে হেডিংলে ও এজবাস্টনের মতো ব্যাটিং সহায়ক উইকেট দেখার সম্ভাবনা কম। তবরং কিছুটা বিপাকে পড়তে পারেন ব্যাটারর

লর্ডসে প্রথম দিনের খেলা ছিল একেবারেই ব্যালান্সড। টস জিতে ইংল্যান্ড ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু প্রথম ঘণ্টাতেই ভারতীয় পেসাররা বিশেষ করে বুমরা, ইংল্যান্ডের ওপেনার বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলিকে বেশ একটু চাপেই রাখেন।

প্রথম সেশনের ড্রিংকস ব্রেকের ঠিক পরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন নীতীশ কুমার রেড্ডি। এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন ডাকেট ও ক্রলিকে। তবে ওলি পোপকে প্রথম বলেই শূন্য রানে জীবন দেন শুভমন গিল। সহজ একটা ক্যাচ ফেলেন তিনি। এরপর অবশ্য উইকেটের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে।  প্রথম দিনের মাঝের সেশনটা ইংল্যান্ডের দখলেই ছিল বলা যায়। এরপর টিব্রেকের পরই আসে সাফল্য। ব্রেকের পর প্রথম ডেলিভারিতে  ওলি পোপকে ফেরান রবীন্দ্র জাডেজা। একটু বাদেই  হ্যারি ব্রুককে বোল্ড করেন জসপ্রীত বুমরা। তবে ভারতের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ফ্যাব ফোরের অন্যতম জো রুট। কেরিয়ারের ৩৭তম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে তিনি। সঙ্গে স্টোকসও রয়েছেন ৩৯এ।  প্রথম দিন ইংল্যান্ডের স্কোর ৪ উইকেটে ২৫১। তবে যা উইকেট  তাতে প্রথম ইনিংসে ৩৫০ রানের লিড প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার পক্ষে যথেষ্ট। সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করা মোটেই সহজ হবে না। সেখানে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করবে কিন্তু ভারত। অর্থাৎ , প্রথম ইনিংসে ভালো ব্যাটিংই ডিভিডেন্ড দেবে ম্যাচের শেষে। লর্ডসের প্রথম দিনের নির্যাস এটাই। 

এদিকে এদিন ইংল্যান্ডের সেই মারকাটারি বাজবল উধাও। বরং জো রুটের ইনিংসটা দেখলে এটা স্পষ্ট যে,  এই পিচে রান করতে গেলে মানতে হবে ক্রিকেটের প্রাথমিক গ্রামার। আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গেলে  মৃত্যু অনিবার্য।লর্ডসে রুট (৯৯ ব্যাটিং) অনেক জমাট। অহেতুক কোনও ঝুঁকি তাঁকে নিতে দেখা যায়নি। আর সেই কারণেই ৩৭ নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে মাত্র এক রান দূরে দাঁড়িয়ে রুট। 

তবে এতো কিছুর মাঝেও নাটকের উপাদান ম্যাচে যে নেই তা নয়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেশনে ৮৫ রানে দুউইকেট স্কোর নিয়ে মাঠে ফেরে। এরপর তারা দ্রুত রান তুলতেও চায় তাদের সেই পরিচিতবাজবলস্টাইলে। তবে, যশপ্রীত বুমরা ও মহম্মদ সিরাজের টানা আক্রমণে রান কিন্তু থমকেই থাকে। এক সময় এমনও হয় যে টানা ২৮টি বল ইংল্যান্ডের কোনও ব্যাটার রানই করতে পারেননি। এই চাপের মধ্যেই, ৩১তম ওভারে জো রুট একটি বল খেলতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করেন, কিন্তু বল তাঁর ব্যাটের বাইরের প্রান্ত ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। তখনই সিরাজকে দেখা যায় রুটকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করে বাজবলের নামে বলতে, ‘বাজ, বাজ, বাজবল! এখন বাজবল খেলো, আমরা দেখতে চাই মাঠে রুট চুপচাপ থাকলেও, সিরাজের এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে।

এর মাঝে বড় ধাক্কা ভারতীয় শিবিরে। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন উইকেটকিপার তথা ভাইস ক্যাপ্টেন ঋষভ পন্থ। লাঞ্চের পরে ম্যাচের ৩৪তম ওভারে  অলি পোপকে বল করছিলেন ভারতীয় পেসার জশপ্রীত বুমরাহ। বল ধরার পরেই দেখা যায় কিপিং করতে সমস্যা হচ্ছে ঋষভের। চোখমুখে ফুটে উঠতে থাকে যন্ত্রণার ছাপ। সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় দলের ফিজ়িওথেরাপিস্ট এবং মেডিক্যাল টিমের বাকি সদস্যরা মাঠে এসে ঋষভের আঙুলে অনেকটা মোটা ব্যান্ডেজ করে দেন। তবে তাতে লাভ হয়নি। মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ঋষভ পন্থ। তাঁর পরিবর্তে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব সামলাতে মাঠে আসেন ধ্রুব জুরেল।

ঋষভের এই চোটে কপালে ভাঁজ ভারতীয় শিবিরের। কারণ. উইকেট কিপিং হয়তো ধ্রুব করে দেবেন, কিন্তু পন্থ না থাকলে ভারতের ব্যাটিংয়ের কী হবে, তা চিন্তায় রাখছেই। এদিকে  ঋষভের চোট কতটা গুরুতর সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। আদৌ এই টেস্টে তিনি ব্যাটিং করতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। প্রথম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি এসেছিল ঋষভের ব্যাট থেকে। ভালো ছন্দে আছেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তবে তাঁর এ ভাবে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় ভারতের সমর্থকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + four =