সুজয়কৃষ্ণর কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ হলেও তা কাজে আসবে কি!

কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের ‘কাকু’কে নিয়ে যাওয়া হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে। সেখানেই তঁর কন্ঠস্বর সংগ্রহও করা হয়। প্রায় সাড়ে চার মাস পর অবশেষে কাকুকে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বের করতে সক্ষম হয় ইডি।

এখন প্রশ্ন হল, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ এত কেন জরুরি তা নিয়েই। এই প্রসঙ্গে  বলতেই হয়,যেদিন প্রথম সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি, সেই দিনই তদন্তকারী সংস্থার অপর একটি টিম হানা দিয়েছিল রাহুল বেরার বাড়িতে। এই রাহুল বেরা হলেন একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। বিষ্ণুপুর থানায় কাজ করেন। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাঁর। সেদিনের অভিযানে রাহুল বেরার ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, রাহুল বেরা নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে একজনের টেলিফোনিক কথোপকথনের একটি ফাইল ইডির হাতে এসেছিল। ওই ব্যক্তি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র বলে দাবি ইডির। ইডির দাবি, অডিও ক্লিপিংয়ে শোনা যাচ্ছে, রাহুলকে বলা হচ্ছে, মোবাইলে থাকা নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য মুছে ফেলো। জানা যাচ্ছে, এটা যে ‘কাকু’রই গলা, তা আদালতে প্রমাণ করতেই কণ্ঠস্বরের নমুনা নিতে চাইছে ইডি।

এরপর সুজয়কৃষ্ণর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ ঘিরে চূড়ান্ত নাটক হতে দেখা যায়। ডিসেম্বরের শুরুতে জোকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স গিয়েও ফিরে এসেছিল। এরপর গত ৭ ডিসেম্বর রাতে হঠাত্‍ আইসিসিইউয়ে স্থানান্তর করা হয়েছিল সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে। সেই সময় শিশুদের জন্য বরাদ্দ আইসিসিইউ বেডে ভর্তি করা হয় তাঁকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর রাতে এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি কেবিনে ফের স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। তবে ২ জানুয়ারি কণ্ঠস্বরের নমুনার উপর ফের জোর দেয় আদালত। এরপরই বুধবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বের করা হয় সুজয়কৃষ্ণকে। অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জোকা ইএসআই-তে।

তবে সুজয় ভদ্র যখন দীর্ঘদিন ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে থাকা এবং তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়ে টানাপোড়েন চলার সময় সময় এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ সামনে আসে। চিকিৎসার নাম করে নাকি কাকুর গলার স্বর পাল্টে ফেলার চেষ্টা চলছিল। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল এসএসকেএম। তবে সত্যিই কি কারও কণ্ঠস্বর বদলে যেতে পারে কি না সে ব্যাপারে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোনও ব্যক্তির কণ্ঠস্বরে বদল আসা যে একেবারে অসম্ভব নয়, সে কথা যদি কারও ভোকাল কর্ডে ক্যানসার হয় এবং যদি রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে সেটির চিকিৎসা হয়, তাহলে অনেকক্ষেত্রেই কণ্ঠস্বর বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কণ্ঠস্বর যদি বদলেও যায়, তাও ভয়েস স্যাম্পেল পরীক্ষায় তা ধরা না পড়ার সম্ভাবনা কম বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।সঙ্গে তাঁরা এও জানান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কণ্ঠস্বরের পিচ বা অ্যাম্পলিটিউড বদলে ফেলা গেলেও, তিন কথা বলার সময় কোথায় শ্বাস নিচ্ছেন, সেই পদ্ধতি পাল্টে ফেলা বোধ হয় মুশকিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one − 1 =