‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’, শাসকদলকে কটাক্ষ শুভেন্দুর

‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়।’ নন্দীগ্রামে একাধিক পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে যাওয়ার পর এমন ভাষাতেই শাসকদলকে কটাক্ষ করতে দেখা গেল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে এদিন তৃণমূলকে হুঁশিয়ারিও দিতে দেখা যায় শুভেন্দুকে। এরই পাশাপাশি এদিন রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনা নিয়ে বলতে গিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু জানান, ‘ভোটের দিন যথেষ্ট হিংসা ছড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবারও ভোট গণনার দিনেও সন্ত্রাস আর হিংসা ছড়ানো হল। তৃণমূল এভাবেই ক্ষমতায় থাকতে চায়।’ সেই সঙ্গে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ত ভুলে গিয়েছেন সারাজীবন কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। অথচ তৃণমূল ভেবেছে এভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেই সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু কেউই পারেনি। এর আগে বামফ্রন্টও ভাবত তাঁরা অনেক বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে যাবে। পারেনি। তার আগে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, ইন্দিরা গান্ধিও ভাবতেন যে তাঁরাই ক্ষমতায় থেকে যাবেন সারাজীবন ধরে। তাঁরাও পারেননি। তৃণমূলও পারবে না। একদিন তাঁদেরও এই অত্যাচার, সন্ত্রাসের শেষ হবে।’

এদিকে উত্তর থেকে দক্ষিণ, জঙ্গলমহল থেকে উপকূলের জেলা, সর্বত্রই ফুটেছে ঘাসফুল। তৃণমূলের ঝোড়ো ইনিংসে হালে বিশেষ পানি পায়নি বিরোধীরা। ধরাশায়ী হয়েছে পদ্ম শিবির। কোথাও কোথাও কোনওমতে মাঠে টিকে রয়েছে বাম-কংগ্রেস। এখনও পর্যন্ত সামনে আসা রেজাল্টে দেখা যাচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ, সব জায়গাতেই এগিয়েছে রয়েছে তৃণমূলের প্রার্থীরা। যদিও এই রেজাল্টকে মানতে নারাজ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ভোটের যে ফল সামনে এসেছে তা মানুষের রায় নয়। এরই রেশ ধরে এদিন শুভেন্দু এ প্রশ্নও তোলেন, ‘কত লোকের সঙ্গে মানুষ লড়বে? এ সব গ্রামের ছাপোষা মানুষ। স্থানীয় এমএলএ, সঙ্গে তৃণমূলের জল্লাদ, ওসি, আইসি, বিডিও তো রয়েছে। তার সঙ্গে শীর্ষপদে বসে থাকা আমলারা রয়েছেন। লড়বে কী করে মানুষ? চরম খিদে মমতার। ওনার সব চাই। সব আসন দখল করতে চাইছেন। তাই এই নির্বাচন নিয়ে কোনও বিশ্লেষণে যাব না। এটা জনগণের রায়ের প্রতিফলন নয়।’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রামে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল তৃণমূলের। সেবার নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতই গিয়েছিল তৃণমূল দখলে। নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বাকি ৭ পঞ্চায়েতও ছিল তৃণমূলেরই দখলে। এবার ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। শুভেন্দুর নন্দীগ্রামে একাধিক পঞ্চায়েত দখল করে নিয়েছে বিজেপি।

এদিকে আবার মঙ্গলবার সকালেই তিনি পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আজ গণনা চলাকালীনই উচ্চ আদালতে মামলার আবেদন করেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন পঞ্চায়েত ভোটের তথ্য দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘গোটা দেশজুড়ে ভোটের নামে তৃণমূলের অপকর্মের নিন্দা হচ্ছে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করে ২-৩ বার খোঁজ নিয়েছেন। এমনকি গণনাতেও কারচুপি করা হচ্ছে। মানুষের রায় মানতে পারছে না তৃণমূল। তৃণমূলকে এই কারচুপির ফলাফুল ভুগতে হবে।’ এদিন তাঁর দায়ের করা মামলার আবেদন গৃহীত হয়েছে হাইকোর্টে। রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দুর করা মামলাকে ঘিরে আগামী দিনগুলিতে ফের উত্তপ্ত হতে চলেছে রাজ্য রাজনীতি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সেই সঙ্গে তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামের পঞ্চায়েতে জয় পেয়েছে BJP। স্বভাবতই এদিন আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা গিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে।

 

 

 

আর এই ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পরেই প্রকাশ্যে এসে তৃণমূলকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে গেলেন বিরোধী দলনেতা।

 

 

 

 

প্রসঙ্গত, ভোট ঘোষণার পর থেকে গোটা রাজ্য থেকেই লাগাতার এসেছে হিংসা-হানাহানির খবর। দিকে দিকে ঝরেছে রক্ত। শুধু ভোটের দিনই হিংসার বলি হয়েছেন প্রায় ২০ জন। অন্যদিকে অসমর্থিত সূত্রে খবর, ভোট ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ভোট হিংসার বলি হয়েছেন প্রায় ৪০ জন। হিংসা কবলিত এই বাংলার এই দুরাবস্থার জন্য রাজ্য সরকারের ‘আমলাতন্ত্রকে’ কাঠগড়ায় তুলেছেন শুভেন্দু। তোপ দেগেছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, ডিজি মনোজ মালব্যের বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 5 =