‘দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের সিন্ডিকেটের ফ্যামিলি গেট টুগেদার’, ঠিক এই ভাষাতেই বিহারের পটনায় বিরোধী জোটের যে বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন নীতিশ, তাকে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘বছরের পর বছর জেল খাটা আসামিরা আজ পটনায় এক সঙ্গে জড়ো হয়েছিল। এরা সবাই মিলে আগামী দিনে তিহার জেলে যাবে।‘ এরই পাশাপাশি শুভেন্দু এও দাবি করেন, ‘বৈঠকের মূল আলোচ্য সূচি ছিল বাংলা-সহ গোটা দেশে দুর্নীতিকে বাঁচিয়ে রাখা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরানোর চেষ্টা করেছেন। ফলে এটা প্রথম তা নয়। ২০১৯ এও কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার স্লোগান দিয়েছিলেন। তার ফল কি হয়েছিল সবাই দেখেছে। পাটনার বৈঠকে তৃণমূল-সহ যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি ছিল তারা নিজেদের দুর্নীতিকে টিকিয়ে রাখতেই একে অপরকে ভোট দেওয়ার আবেদন করছেন। এ সব করে কোনও লাভ হবে না। দেশকে বাঁচাতে গেলে নরেন্দ্র মোদিকেই ভোট দিতে হবে।’ এখানেই শেষ নয়, নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদ্ধ করে শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘ছবিতে দেখা গেছে গরু পাচারকারীরা পটনায় গিয়ে লালু প্রসাদের পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নিয়েছেন। বলেছেন লালুজি, গরু পাচার তো শেষ। এ বার গো-খাদ্য চুরি করতে চাই। কিভাবে তা করব তার ট্রেনিং দিন।’
এখানেই শেষ নয়, কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম এদের রাজনৈতিক অবস্থান ও কাছাকাছি আসা যে স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে বদলে যেতে পারে, সেই তত্ত্বও উসকে দেন শুভেন্দু। টুইটারে খোঁচা দিয়ে বিরোধী দলনেতা লেখন, ‘পশ্চিমবঙ্গে যেমন কংগ্রেস আর সিপিএম হল তৃণমূলের বি টিম। আবার দিল্লিতে তৃণমূল আর সিপিএম মিলে কংগ্রেসের বি টিম। আবার যদি কেরলে দেখা যায়, তাহলে সেখানে সম্মুখ সমরে কংগ্রেস ও সিপিএম।‘
এরই পাশাপাশি বিরোধী জোটের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, গোটা বিষয়টাই ভীষণ বিভ্রান্তিকর। আর এখানেই শুভেন্দুর প্রশ্ন, ‘তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গে এই তিনটি দল নিজেদের মধ্যে ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচ’ খেলছে?’ উল্লেখ্য, একদিকে যখন পটনায় তৃণমূল-কংগ্রেস-সিপিএম একসঙ্গে বৈঠকে বসছে। তখন আবার বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে সম্মুখ সমরে কংগ্রেস আর সিপিএম। সিপিএম আর কংগ্রেস সার্বিকভাবে কোনও জোটের ঘোষণা না করলেও জেলাস্তরে কোথাও কোথাও সমঝোতা করে চলছে।
ফলে এই সব ইস্যুকে সামনে রেখে পটনায় বিরোধী বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধিদের একসঙ্গে বৈঠকে বসা নিয়ে জোর সমালোচনা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বাংলার নিচুতলার কংগ্রেস ও বাম কর্মীদের উদ্দেশে শুভেন্দু লেখেন, ‘এখানে হতভাগ্য বাম-কংগ্রেস কর্মীরা মাঠে-ময়দানে রক্ত ঝরাচ্ছেন, ঘাম ঝরাচ্ছেন আর ওদিকে তাঁদের শীর্ষ নেতারা পটনায় সেটিং করছেন। কারা এদের ভুল বোঝাচ্ছেন? রাজ্য নেতৃত্ব নাকি হাই কমান্ড?’ শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূলের ‘দাঁত-নখ’-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে একমাত্র দল হল বিজেপিই।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে শুক্রবার পটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলি বৈঠক বসেছিল। সেই বৈঠকের পর একটি সাংবাদিক সম্মেলন হয়। সেখানে বিরোধী দলগুলির তরফে জানানো হয়, লোকসভা নির্বাচন জোট বেঁধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে সিমলাতে ফের বৈঠকে বসতে চলেছে তারা। এই প্রসঙ্গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বলেন, ‘একসঙ্গে ভোটে লড়ার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি হয়েছে। মল্লিকার্জুন খাড়গে মিটিং করবেন। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কোথায় কোন দল লড়াই করবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’