বন্ধুদের সঙ্গে নিক্কো পার্কে ঘুরতে গিয়ে বুধবার মৃত্যু হয় রাহুল দাস নামে এক যুবকের। ওই ঘটনায় এবার ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হল পরিবার। নিকো পার্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ওয়াটার পার্কে স্নান করার সময় আচমকা অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের।তবে বৃহস্পতিবার রাহুলের পরিবারের তরফে নিক্কো পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়।সেখানে সংশ্লিষ্ট পার্কের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগই তোলা হয়েছে বলে সূত্রে খবর।
সূত্রে এ খবরও মিলেছে, পরিবারের অভিযোগ, নিক্কো পার্কে প্রাথমিক চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ রাহুল যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, সেই সময় সেখানে তাঁকে বসিয়ে রাখা হয় ৷ পরে সেখান থেকে বের করা হয় । ঠিক সময় চিকিৎসা করলে হয়তো প্রাণ যেত না রাহুলের ৷ সেই কারণে তাঁর পরিবারের প্রশ্ন, কেন রাহুলকে দীর্ঘক্ষণ ধরে ফেলে রাখা হয়েছিল কেন তা নিয়েও। প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় বিনোদন পার্কের কেন কোনোরকমের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কোনও চিকিৎসক নেই তা নিয়েও। একইসঙ্গে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন রাহুলকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে আনা হল সে ব্যাপারেও। প্রশ্ন উঠেছে, কোনও স্ট্রেচারের ব্যবস্থা নেই কেন তা নিয়েও। এই প্রসঙ্গে মৃতের পরিবারের সদস্যেদের তরফ থেকে এটাও বলা হচ্ছে, এই ধরনের বিনোদন পার্কে নির্দিষ্ট প্রতিদিনের মতো চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু বুধবার সেই চিকিৎসক ছিল না। যদিও পার্ক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করছে। এছাড়াও ঘটনা ঘটার পরে অ্যাম্বুল্যান্স আসতে দেরি করেছিল। কিন্তু পার্ক কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগও অস্বীকার করেছে। উল্টে নিক্কো পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়ে তারা জানিয়েছে, ঘটনা ঘটার সঙ্গেসঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রাহুলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বেসরকারি হাসপাতালে, কোনও সরকারি হাসপাতালে নয়। পরিবারের আরও অভিযোগ, ঘটনা ঘটার পরে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্ত রাহুলের বন্ধুবান্ধবরা বুকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পার্ক কর্তৃপক্ষ ছুঁতে দেয়নি। এক্ষেত্রে পার্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্দিষ্টভাবে কীভাবে বুকে চাপ দিতে হয়, সেটা সবাই জানে না। ফলে আরও খারাপ ঘটনা ঘটতে পারত। সেই কারণে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিল পার্ক কর্তৃপক্ষ। যাতে তাড়াতাড়ি রাহুল দাস সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে এই সব অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, রাহুল দাস উত্তর কলকাতার মুরারিপুকুরের বাসিন্দা ৷ তিনি বাগুইআটিতে থাকতেন। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ তিনি সল্টলেকের নিক্কো পার্কে যান। সেখানেই তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়৷ বিধাননগর দক্ষিণ থানার তরফে সেই সংক্রান্ত একটি মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ অভিযোগ দায়ের হওয়ার বিষয় নিয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের কোনও পদস্থ আধিকারিক মুখ খুলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিধাননগর কমিশনারেটের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘পরিবারের তরফ থেকে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি । সমস্ত দিকগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এদিকে যুবকের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তাঁর বন্ধুবান্ধবদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।বন্ধুদের বয়ানও নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে পার্ক কর্তৃপক্ষের বয়ানও নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আবারও পার্কের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।উল্লেখ্য, রাহুল বুধবার সাতজন বন্ধু ও বান্ধবীর সঙ্গে নিক্কো পার্কে গিয়েছিলেন৷ তিনি বন্ধুদের সঙ্গে নায়াগ্রা ফলস এলাকায় স্নান করতে যান৷ এরপর নিরাপত্তারক্ষীরা দেখেন, রাহুলকে তাঁর বন্ধুরা জল থেকে অচৈতন্য অবস্থায় তুলে আনছেন৷ সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাহুলকে ৷ সেখানেই চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে যে রাহুল অসুস্থ বোধ করছিলেন৷ তাই বন্ধুরা তাঁকে জল থেকে তোলেন ৷ বিষয়টি দেখে সেখানে চলে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা ৷ কর্তৃপক্ষকেও খবর দেওয়া হয়৷ তারাও সেখানে উপস্থিত হয় ৷ সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে যাওয়া হয়৷ পরে নিক্কো পার্কের অ্যাম্বুল্যান্সে নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।তাই ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল, তা জানতে পুলিশ সাতজন বন্ধু–বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছে ৷ আলাদাভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্তকারীরা ৷ প্রত্যেকের বয়ান মিলিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর ৷