ফুডকোর্ট থেকে অ্যাক্রোপলিস মলে অগ্নিকাণ্ড, ঘটনাস্থলে ১৫টি ইঞ্জিন, সাড়ে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আগুন

দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম ঝাঁ চকচকে শপিং মহল অ্যাক্রোপলিস। নামী ব্র্যান্ডের শোরুম, রেস্তোরাঁ তো আছেই, বহুতলের উপরের দিকে রয়েছে একাধিক অফিস। চারতলা পর্যন্ত রয়েছে শপিং মল, আর তার উপরে একাধিক অফিসে কাজ করেন বহু কর্মী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ এই অ্যাক্রোপলিস মলেই আগুন লাগে। এই মলের ওপরে রয়েছে বড় ফুড কোর্ট। সেই ফুড কোর্টেই আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ক্রমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে মলের ভিতরে। দিনের ব্যস্ততম সময়ে বহুতল এই বিল্ডিং-এ প্রচুর কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে শপিং মলে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছিল। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্ম বাজতে শুরু করে। দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করেন কর্মী থেকে ক্রেতা সবাই। ফলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।

সকালে আগুন লাগার পরই দমকলে খবর দেয় শপিং মল কর্তৃপক্ষ। একে একে দমলকের ইঞ্জিন যায় ঘটনাস্থলে। খবর যায় দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর কাছেও। এদিকে জনবহুল রাস্তার একেবারে পাশেই এই অ্যাক্রোপলিস মল হওয়ায় ব্যস্ত সময়ে আগুন লাগায় আতঙ্ক ছড়ায় পথচারীদের মধ্যেও। আগুন লাগার খবর পেতেই, মলে ভিতর থেকে পরপর বেরিয়ে আসতে থাকেন মানুষজনও। এরই মাঝে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকলের ৪টি ইঞ্জিন। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে দেরি হওয়ায় এই ইঞ্জিনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০-এ। এরপর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ তে। এদিকে শুধু দমকলকর্মীই নয়, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাওপৌঁছান ঘটনাস্থলে।আগুনকে বাগে আনতে অক্সিজেন সিলিন্ডার মলের ভিতরে ঢোকেন দমকলকর্মীরা।কারণ, কাচে ঘেরা মল কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ায় এক বদ্ধ পরিবেশে ধোঁয়াই হয়ে ওঠে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এরপরই দমকলের কর্মীরা কাচ ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে থাকেন।পাশাপাশি, হাইড্রলিক ল্যাডার নিয়ে উদ্ধারের কাজেও নামেন দমকল কর্মীরা। স্কাইলিফট ব্যবহার করা হয় মানুষদের মল থেকে বের করে আনতে।

এদিকে আরও বড়সড় দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য দমকলের তরফ থেকে পুলিশের কাছে অনুরোধ জানানো হয় যান চলাচল বন্ধ রাখতে। এরপরই পুলিশ ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এদিকে দক্ষিণ কলকাতা থেকে ইএম বাইপাসে যাওয়ার রাস্তা এটি। ফলে কর্মব্যস্ত দিনের সকালে এই ঘটনার জেরে তৈরি হয় ব্যাপক যানজট।

এদিকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়েও দুর্ভোগে পড়েন অ্যাক্রোপলিসে আটকে থাকা মানুষজন।কারণ, মলের ১২ ফুটের সিঁড়ি আবর্জনায় ভরা। সিঁড়ি জুড়ে সিমেন্টের বস্তা, আবর্জনা, জঞ্জাল। ফলে কুণ্ডলি পাকানো ধোঁয়ার মধ্যে দৃশ্যমানতা কমায় নামতে গিয়ে চোট পান অনেকে। আর এই ২২ তলা থেকে সংকীর্ণ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ১৪ তলায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এক গর্ভবতী মহিলা। আটকে পড়েন দুই প্রতিবন্ধীও।

তবে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে অ্যাক্রোপলিস মলের আগুন। কোনও হতাহতের খবর নেই। মলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা ছিল, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল। সঙ্গে সঙ্গে কাজ করেছে পুরোটাই। মলের আন্ডারগ্রাউন্ডে ৫ লক্ষ লিটারে রিসার্ভার ছিল। সেখান থেকে জল নিয়ে দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। মলের অগ্নিনির্বাপণে কোনও গাফিলতি নেই। ১৫ থেকে ৩০ অন্তর চেক করা হয়। আমরা ডিটেকশন, ফায়ার নেভানোর সব উন্নত ব্যবস্থা রেখেছি।’

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 1 =