বাংলার পাঁচ নতুন মুখ সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে

বাংলা থেকে পাঁচ নতুন মুখ সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। পলিটব্যুরোতে জায়গা পেলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। এতদিন পলিটব্যুরো ছিলেন মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম আর সূর্যকান্ত মিশ্র। সেলিম, রামচন্দ্র ডোম থাকলেন। বয়সের নিয়মে বাদ গেলেন সূর্যকান্ত। এলেন শ্রীদীপ। বাংলার সদস্যরা ছাড়াও বয়সের কারণে পলিটব্যুরো থেকে বাদ পড়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তাঁর জায়গায় এলেন ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী।

সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এমএ বেবি। রবিবার মাদুরাইয়ে সিপিআই(এম) ২৪তম সম্মেলনের মঞ্চ থেকে নির্বাচিত ৮৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়েছে। ১৮ সদস্যের পলিট ব্যুরো নির্বাচিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, অমরা রাম, বিজু কৃষ্ণন, মারিয়াম ধাওয়ালে, ইউ বাসুকি, কে বালাকৃষ্ণন, জিতেন্দ্র চৌধুরী, আর অরুণকুমার এই পার্টি কংগ্রেস থেকে পলিট ব্যুরোয় প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে মহিলার সদস্যের অংশ ১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে এবার হয়েছে ২০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা ঘোষ, দেবব্রত ঘোষ, সৈয়দ হোসেন, সমন পাঠক নবনির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার নবনির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা মোট ৩১। একজনকে পরে নির্বাচিত করা হবে।

সামগ্রিকভাবে প্রজন্ম বদল হল পলিটব্যুরোতে। বাতিল খাতা দেখলেই বিষয়টা খানিক স্পষ্ট হবে। বাদ পড়লেন প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, সুহাসিনী আলি, জি রামকৃষ্ণন, মানিক সরকার, সূর্যকান্ত মিশ্র।  সকলেই ৭৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরো থেকে বাদ গেলেন। ব্যতিক্রমী হলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তাঁর বয়স হলেও ব্যতিক্রমী হিসাবে রেখে দেওয়া হল।

এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকায় রয়েছেন যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ বোস, সমন পাঠক, দেবব্রত ঘোষ ও সৈয়দ হোসেন। সমন, দেবব্রত ও সৈয়দ এখন দার্জিলিং, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক। সিপিআইএমের নিয়মে, এক সঙ্গে তিন স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না। ফলে, এই তিন জনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ অনুমতি নেওয়া না কি জেলা সম্পাদক পদে বদল আনা হবে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে সিপিআইএমের অন্দরে। কারণ ওই তিন জেলা সম্পাদক রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। আবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হলেন।

পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে বেবি এদিন জানান, ‘কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু পার্টির সব স্তরে নবীন নেতৃত্বকে তুলে আনার অবস্থান থেকে আমরা সরতে চাইনি।’ পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, নয়া ফ্যাসিবাদী চরিত্রের শক্তিকে মদত দিচ্ছে দেশের শাসক শ্রেণি। একদিকে গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর প্রবল আঘাত। আরেকদিকে জীবনজীবিকার ওপরও নেমেছে মারাত্মক আক্রমণ। নয়া উদারবাদ এবং সাম্প্রদায়িক কর্পোরেট হিন্দুত্ববাদ- দুয়ের বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। তার জন্য দরকার বামপন্থী শক্তির বিকাশ। বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির ঐক্যকে মজবুত করেই এই বিকাশ প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরি সিপিআই(এম)’র স্বাধীন বিকাশও।
বেবি বলেন, পার্টি কংগ্রেসের অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় সমালোচনা এবং আত্ম সমালোচনা হয়েছে। পলিট ব্যুরোর ভূমিকার মূল্যায়ন করেছেন প্রতিনিধিরা। এই মতবিনিময় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী করার জন্যই অত্যন্ত প্রয়োজনের। দেশের শ্রমজীবী কৃষিজীবির বিপুল অংশকে এখন শাসক শ্রেণির প্রতিনিধি রাজনৈতিক শক্তি আকর্ষণ করতে পারছে। কেন আমরা এই অংশকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে পারব না, তা নিয়ে হয়েছে আলোচনা। আগামী দিনে চলার দিশা স্থির করেছে পার্টি কংগ্রেস। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি এই লক্ষ্যেই এগোবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − 1 =

preload imagepreload image