টানা বর্ষণে বন্যা ত্রিপুরায়, ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় ১০,৬০০ জনের, জানালেন রাজস্বসচিব

টানা বর্ষণের জেরে বন্যা ত্রিপুরায়। ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ত্রিপুরা সরকার ৬০টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এই ত্রাণ শিবিরে ২,৮০০ পরিবারের প্রায় ১০,৬০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন, এমনটাই জানান ত্রিপুরার রাজস্বসচিব ব্রিজেশ পান্ডে। একই সঙ্গে তিনি এও জানান, ‘সক্রিয় বর্ষা পরিস্থিতি এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে ৩১ মে ও ১ জুন ত্রিপুরা জুড়ে প্রবল থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুসারে রাজ্যের সমস্ত জেলাতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।’  একইসঙ্গে তিনি এও জানান, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি নিয়মিত খতিয়ে দেখছেন। উদ্ধারকাজে মোট ১৪টি রেসকিউ টিম মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরায় ১১টি এবং উনকোটিতে কয়েকটি দল রয়েছে। পশ্চিম ত্রিপুরায় যারা উদ্ধারের কাজে রয়েছেন সেই তালিকায় রয়েছে, ২টি এনডিআরএফ, ৩টি এসডিআরএফ, ১টি আসাম রাইফেলস, ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস, ৪টি সিভিল ডিফেন্স,‘আপদা মিত্র’, ভারত স্কাউটস অ্যান্ড গাইডস। এরা একে অপরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে এই ভয়ঙ্কর অবস্থার সঙ্গে যুঝছে। এর পাশাপাশি রাজস্বসচিব সব জেলাশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং সম্ভাব্য সমস্ত প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় আগরতলায় ১৪০ মিমি ও উনকোটি জেলার কৈলাসহরে ১৯২.২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানানো হয়। এই বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ত্রিপুরার রাজস্বসচিব ব্রিজেশ পান্ডে এও জানান,
আক্রান্ত জেলাগুলির মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরায় ৪৮টি, খোয়াইয়ে ৩টি, উনকোটিতে ৩টি এবং উত্তর ত্রিপুরায় ৬টি অর্থাৎ সব মিলিয়ে মোট ৬০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। উত্তর ত্রিপুরা, উনকোটি, ধলাই ও পশ্চিম ত্রিপুরার বিভিন্ন সড়কে গাছপালা পড়ে ও ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক, এসডিআরএফ, বন দফতর, পিডব্লিউডি এবং কুইক রেসপন্স টিমের দ্রুত পদক্ষেপে অধিকাংশ রাস্তা খুলে দেওয়া হয় এবং কাজ এখনও চলছে।
এর পাশাপাশি ব্রিজেশ পান্ডে এও জানান, ‘প্রাথমিক রিপোর্ট অনুসারে, মোট ২০১টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৯২টি সম্পূর্ণভাবে ও ১০৯টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বাড়িগুলি মূলত গোমতী, খোয়াই, সিপাহিজলা ও উত্তর ত্রিপুরা জেলায় অবস্থিত। সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নেওয়া হচ্ছে।’ সঙ্গে তিনি এও জানান, ‘আগরতলায় হাওড়া নদীর জলস্তর ৫টা নাগাদ ছিল ১০.৯১ মিটার, যা বিপদসীমার উপরে। তবে সোমবার সকাল থেকেই স্থিতিশীল এবং গত এক ঘণ্টায় হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রশাসন নদীর স্তর নিরীক্ষণ করছে ও আগাম সতর্কতা নিচ্ছে। আগরতলায় ১৭টি পাম্প হাউস রয়েছে, যেগুলি হাওড়া ও কাটাখাল নদীতে বৃষ্টির জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য় করে। এদিকে রবিবার মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুক্ষণের জন্য জল দাঁড়িয়ে যায়। তবে এরপর তা ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে সরে যায়। রাজ্য সরকার সকল নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সমস্ত দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে বলেও জানান ত্রিপুরার রাজস্বসচিব ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 3 =