চিকিৎসা জগতে এক বিরল সাফল্যের নজির গড়ল ফোর্টিস হাসপাতাল, আনন্দপুর। ভুটানের ৫৩ বছর বয়সী এক মহিলার হৃদযন্ত্র থেকে বিশাল আকারের টিউমার অপসারণে সফল হলেন হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জনরা। প্রায় ৮x৮x৭ সেন্টিমিটার আকারের এই টিউমারটি বেলুনের মতো ফুলে গিয়ে হৃদয়ের প্রায় পুরো চেম্বার দখল করে ফেলেছিল। রোগীর জীবন তখন চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছেছিল।
এরপর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর উন্নত ইমেজিং পরীক্ষা—কার্ডিয়াক এমআরআই ও সিটি পালমোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি—করা হয়। তাতে দেখা যায়, হৃদয়ের কাছে অ্যাওর্টায় অস্বাভাবিক ফোলাভাব তৈরি হয়েছে। রক্ত বহনকারী কয়েকটি ধমনী পুরু হয়ে গিয়েছে এবং সরু হয়ে পড়েছে, ফলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এছাড়া একটি হার্ট ভালভে লিক ছিল, যেখানে রক্ত উল্টো দিকে প্রবাহিত হচ্ছিল, আরেকটি ভালভ সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। এর ফলে হৃদয়ের ডানদিকের চেম্বারে স্পষ্ট গাঁট দেখা যাচ্ছিল।
রোগীর আগে থেকেই ছিল তাকায়াসুর অ্যাওর্টো-আর্টেরাইটিস নামের বিরল রোগ, যা অ্যাওর্টায় প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই জটিল রোগের কারণে সার্জারির ঝুঁকি আরও বেড়ে গিয়েছিল।
তবে এতো ঝুঁকি সত্ত্বেও ড. কে. এম. মাণ্ডানা, ডিরেক্টর – কার্ডিও থোরাসিক অ্যান্ড ভাসকুলার সার্জারি, ফোর্টিস আনন্দপুরের নেতৃত্বে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম এই জটিল ওপেন-হার্ট সার্জারি সম্পন্ন করেন। সার্জারির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল—
- রোগীর অ্যাওর্টিক ভালভকে মেকানিক্যাল ভালভ দিয়ে প্রতিস্থাপন।
- হৃদয়ের ভেতরে জমে থাকা রক্তের জমাট অপসারণ।
- হৃদযন্ত্রকে ঘিরে থাকা টিস্যু দিয়ে তৈরি পেরিকার্ডিয়াল প্যাচ ব্যবহার করে ফোলাভাব মেরামত।
অত্যন্ত জটিল হলেও সার্জারি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়। অপারেশনের পর রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং স্থিতিশীল অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।
এই প্রসঙ্গে ড. কে. এম. মাণ্ডানা জানান, “রোগীকে যখন ভর্তি করা হয়, তাঁর অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটজনক। ফোলাভাবটি অস্বাভাবিকভাবে বড় ছিল এবং তা হৃদয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে চেপে ধরেছিল। এ ধরনের কেস খুবই বিরল এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও দলগত কাজের প্রয়োজন হয়। আমরা আনন্দিত যে সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং রোগী এখন ভালো আছেন।”
ফোর্টিস হাসপাতাল কলকাতার ফ্যাসিলিটি ডিরেক্টর আশিস মুখোপাধ্যায় জানান, “এই সফল সার্জারি আবারও প্রমাণ করে যে জটিল কার্ডিয়াক এবং ভাসকুলার কেস পরিচালনায় ফোর্টিস কলকাতার ক্লিনিকাল দক্ষতা অনন্য। আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম, উন্নত ডায়াগনস্টিক প্রযুক্তি এবং মাল্টিডিসিপ্লিনারি পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে রোগীরা ভারত ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলি থেকেও বিশ্বমানের হার্ট কেয়ার পান।”

