মেরুদণ্ডের গুরুতর বক্রতা সহ ৭৪ বছর বয়সী মহিলার উপর রোবোটিক-সহায়ক পিত্তথলির অস্ত্রোপচারে ফোর্টিস হাসপাতাল আনন্দপুরের মাইলফলক স্থাপন

আনন্দপুরের ফোর্টিসে জিআই এবং রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমে এক ৭৪ বছর বয়সী বৃদ্ধার সফলভাবে পিত্তস্থলীর (গলব্লাডার অপারেশন) করা হল। ফোর্টিস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ওই বৃদ্ধার মেরুদণ্ডের গুরুতর বিকৃতিও ছিল। এই সার্জরি সফল ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় জিআই এবং রোবোটিক্স অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে একটি নতুন ক্লিনিকাল মানদণ্ড স্থাপন করে। হাসপাতল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়, ওই রোগীর গলব্লাডার এম্পাইমা ধরা পড়ে। এটি এক ধরনের গুরুতর সংক্রমণ যা পিত্তথলি অর্থাৎ গলব্লাডারের মধ্যে পুঁজ জমে। তবে রোগীর গুরুতর মেরুদণ্ডের বক্রতার কারণে অস্ত্রোপচারটি চিকিৎসকদরে কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, মেরুদণ্ডের বিকৃতির ফলে পাঁজর এবং কোমরের মধ্যে ন্যূনতম জায়গা তৈরি হয়। এরফলে চিকিৎসকদের পিত্তথলিতে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর আনন্দপুরের ফোর্টিস হাসপাতালের রোবোটিক, জিআই এবং জেনারেল সার্জারির অধিকর্তা ডঃ উদিপ্তা রায়ের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল অস্ত্রোপচারের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে উন্নত রোবোটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
ডাঃ রায়ের সঙ্গে পরামর্শ করার আগে, কলকাতার একটি শহর-ভিত্তিক হাসপাতালে রোগীর একটি ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে এই পদ্ধতিটি সফল হয়নি এবং বন্ধ করতে হয়েছিল কারণ ল্যাপারোস্কোপিক ক্যামেরা মেরুদণ্ডের এই বক্রতার কারণে শুধুমাত্র রোগীর পাঁজরের প্রান্তের ছবি তুলতে পেরেছিল। এরপর ওই রোগী ডা. উদিপ্তা রায়ের কাছে আসেন। রোগীর মেরুদণ্ডের এই জটিলতা সত্ত্বেও, ফোর্টিস হাসপাতাল আনন্দপুর এই চ্যালেঞ্জিং কেসটি গ্রহণ করে এবং সফলভাবে সংক্রামিত গলব্লাডারে অস্ত্রোপচারও করে।
এই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলি ছিল সে ব্যাপারে বিশদ বিবরণ দিতে গিয়ে, ফোর্টিস আনন্দপুরের রোবোটিক, জিআই এবং জেনারেল সার্জারির পরিচালক ডাঃ উদিপ্তা রায় জানান, ‘পিত্তথলির এম্পাইমা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। যেমন পিত্তথলি ফেটে যাওয়া বা ব্যাপক সংক্রমণ এবং কিছু ক্ষেত্রে হেপাটাইটিসও হতে পারে। বয়স্ক রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারণে এটি আরও বেশি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষেত্রে, রোগীর বয়স, সেইসাথে তার গুরুতর মেরুদণ্ডের বিকৃতি জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়। কারণ এরফলে তার বুক এবং পেটের মধ্যে স্থান হ্রাস পায় এবং ল্যাপারোস্কোপিক কৌশলগুলির ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে। এখানেই রোবটের সহায়তায় অস্ত্রোপচার করে রোগীকে এই সমস্যা থেকে বের করে আনা হয়। রোবট-সহায়ক যন্ত্রগুলি রোবোটিক ক্যামেরার চলাচলের একটি বৃহত্তর পরিসীমা এবং বর্ধিত থ্রিডি ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রদান করে। এর ফলে অস্ত্রোপচারের সময়, পুঁজ ভর্তি গলব্লাডার নিষ্কাশন করা হয়, পিত্তথলির সঙ্গে রোগাক্রান্ত পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয় এবং এর উৎসের সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুরো অস্ত্রোপচারটি শেষ করা হয়েছিল প্রায় দুই ঘন্টার মধ্যেই।
এই অস্ত্রোপচারের পর, রোগী ব্যথাহীনভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং তাঁকে একটি নির্দিষ্ট ডায়েট প্ল্যানের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই সময় তাঁকে কম সময়ের ব্যবধানে কম পরিমাণে খাবার দেওয়া হচ্ছিল। যা শরীরকে পিত্তকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে এবং হজমে সহায়তা করতে সহায়তা করে। একইসঙ্গে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ওষুধগুলি কমিয়ে আনা হয়, যা রোগীকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।’
এই প্রসঙ্গে কলকাতার ফোর্টিস আনন্দপুরের ফেসিলিটি ডিরেক্টর আশিস মুখোপাধ্যায় জানান, ‘ফোর্টিস হাসপাতালের এই সফল রোবোটিক-সহায়ক পদ্ধতিটি জটিল ক্ষেত্রে পরিচালনার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী অস্ত্রোপচারের কৌশলগুলির গুরুত্বকে তুলে ধরেছে, যা ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির ক্ষেত্রে এক চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে পুরো দলটি রোবোটিক এবং জিআই সার্জারির ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এই সাফল্যের মাধ্যমে আমরা আরও একবার প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আমরা কেবল আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তিতেই সজ্জিত তাই নয়, বরং বিশিষ্ট, অত্যন্ত দক্ষ এবং সাহসী চিকিৎসকদের একটি দলও রয়েছি যারা চ্যালেঞ্জগুলি গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এই যুগান্তকারী কৌশলগুলির মাধ্যমে রোগীর পরিচর্যায় উৎকর্ষতা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার জন্য আমরা ডঃ উদিপ্তা রায় এবং তাঁর নিবেদিত দলকে অভিনন্দন জানাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − 6 =