‘জমিদারি হটাও, বাংলা বাঁচাও’- নির্বাচনী নয়া স্লোগান বেঁধে দিলেন অভিষেক

২০১১-তে ‘বদলা নয়, বদল চাই’ – এর ডাক দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পালাবদলের বৈতরণী পার করতে কিছুটা নরমভাবাপন্ন স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল ঘাসফুল শিবির। ২০২১-এর নির্বাচনের দোরগোড়ায় সেই স্লোগান পাল্টে যায়। ‘খেলা হবে’-র মতো দুটি শব্দবন্ধে ছেয়ে যায় গোটা রাজ্য। এবার, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে কিছুটা আক্রমণাত্মক স্লোগান বেঁধে দিতে দেখা গেল তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আগামী নির্বাচনে তৃণমূলের স্লোগান, ‘জমিদারি হটাও, বাংলা বাঁচাও।’ এবারের ভোট প্রতিরোধের ভোট, প্রতিশোধের ভোট’।

এদিকে নির্বাচনের জন্য বিশেষ সময়ও নেই। আগামী মার্চ মাসেই যে লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে এদিন দলের পদাধিকারীদের সতর্ক করে সব প্রস্তুতি সেরে ফেলার বার্তাও দেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন কমান্ড। একদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার কথা এবং অন্যদিকে রাজ্য সরকার উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সর্বমুখী প্রচারে নামতে হবে দলকে সে কথাও এদিনের বৈঠক থেকে স্পষ্ট করে দেন তিনি।

এদিকে সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্যের শাসক দলকে ত্রিমুখী আক্রমণে নেমেছে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম। সেই বিষয় নিয়ে দলীয় মিটিংয়ে এদিন অভিষেক বলেন, ‘সন্দেশখালি নিয়ে এত মাতামাতি। আর চোপড়ায় বিএসএফের কারণে চারটে ফুটফুটে বাচ্চা মারা গেল। অবৈধ ড্রেন করছিল বিএসএফ।’ আর এখানেই অভিষেকের প্রশ্ন, ‘চোপড়ায় বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল গেছে? রাজ্যপালের কাছে বিজেপি গেলে ২৪ ঘণ্টায় যান সন্দেশখালি। আর এখানে তিনি যান না।’

এদিকে সন্দেশখালি নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে দিয়ে গত বুধবার টাকিতে আহত হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পুলিশি হেনস্থার অভিযোগ আনা হয় বিজেপির তরফে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এদিন অভিষেক বলেন, ‘বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পা পিছলে পড়ে গেলেন। তার জন্য সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটি ডেকে পাঠাচ্ছেন আধিকারিকদের। আর আমাকে, মহুয়া, শান্তনু সেন, বীরবাহাকে যখন মারা হল তখন স্বাধিকার রক্ষা কমিটি কোথায় ছিল?’

এদিনের বৈঠক থেকে একদিকে, দুর্নীতি সহ একাধিক ইস্যুতে বিজেপির অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন আর অন্যদিকে, ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিক কংগ্রেস এবং সিপিএমের জোড়া আক্রমণ সবই উঠে এল এদিনের আলোচনায়। নির্বাচনী প্রচারে কী ভাবে ঠেকাবে তৃণমূল তারই ‘টাস্ক বুক’ এদিন তৈরি করে দেন অভিষেক। ভার্চুয়ালি বৈঠকে, তিনি জানিয়ে দেন, ২ বছর ধরে কেন্দ্র বিরোধী আমাদের লড়াইয়ের কথা মানুষের কাছে প্রচার করতে হবে আগামী ১৫ দিন। জেলায় জেলায় সহায়ক শিবির করতে হবে তৃণমূলের উদ্যোগে। সেখানে বিধায়ক, সাংসদদের যেতে হবে। যেখানে বিধায়ক নেই, সেখানে স্থানীয় ব্লক সভাপতিদের যেতে হবে।

এদিন দলীয় নেতাদের কাছে দলের প্রচার বার্তা একসুরে বেধে দেওয়ার অন্যতম প্রধান বিষয়ই ছিল কেন্দ্রীয় বঞ্চনা। এটি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট, সেই কারণে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সঙ্গে বঞ্চনার বার্তাকেই আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। অভিষেক এদিনের বৈঠকে বলেন, ‘রাজ্য কেন্দ্রর কাছে আর মাথা নত করবে না। কেন্দ্রর কাছে হাত না পেতে আবাসনের টাকা তিনি নিজেই দিচ্ছেন। মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।’ অর্থাৎ, কেন্দ্রের পরোয়া না করে রাজ্যই যে জনসাধারণের ‘ত্রাতা’ সেটাই বোঝাতে হবে মানুষের কাছে গিয়ে।

এরই পাশাপাশি আগামীদিনের আন্দোলনের জন্য কার্যত নতুন সেনাবাহিনী তৈরি করতে চলেছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তা নিয়েও শাসকদলের নেতা কর্মীদের একাধিক নির্দেশ দেখা যায় অভিষেককে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘দু’জন মাদার, একজন যুব, একজন মহিলা কর্মীর নাম সব বুথ থেকে বিধায়কেরা আগামী ২৯ তারিখের মধ্যে পাঠাবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। এঁরা আগামীদিনে সব কর্মসূচিতে সৈনিক হিসাবে কাজ করবে।’ পাশাপাশি অভিষেকের নির্দেশ, আগামী ৫ দিনের মধ্যে দলের সমস্ত বিধায়ককে তাঁর বিধানসভা এলাকার ১০ জন এসসি, ৫ এসটি মানুষের নাম পাঠাতে হবে। সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, ‘এমন নাম পাঠাবেন যাদের গ্রহণযোগ্যতা, প্রভাব আছে। মানুষ যাঁদের চেনে। যাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। তাঁদের নাম পাঠাবেন। আগামীদিনে দল এই ১৫ জনকে কাজে লাগাবে। ধারাবাহিক বিজেপির অত্যাচার এসসি, এসটির দের ওপর অত্যাচার, অপমান। তা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরবেন এঁরা। আমার কাছের লোক হলে হবে না। নাম যাচাই করবে দল।’

এরই পাশাপাশি তিনি এও জানান, আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সব ব্লকে হবে সহায়তা শিবির। আর এই সহায়তা শিবির করতে হবে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে। পূর্ণাঙ্গ অঞ্চল কমিটি তথ্য সংগ্রহ করবেন। এই শিবির আগামী ২৫ তারিখ অবধি হবে। সকাল ১০’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা আট ঘন্টা এই শিবির চলবে। একটা ফর্ম দেওয়া হবে। সেটা পূরণের পর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এদিন উঠে আসে কেন্দ্রে সাংসদের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাও। এই প্রসঙ্গে অভিষেক জানান, ‘বীরবাহা হাঁসদা, মহুয়া মৈত্রকে দিল্লিতে কী ভাবে নিগৃহীত করা হয়েছে দিল্লিতে তা দেখেছেন। এই প্রসঙ্গে সাংসদ বিধায়কদের নির্দেশ, এটা নিয়ে ঢালাও প্রচার করুন। সুদীপ বন্দোপাধ্যায় ও ডেরেক ও ব্রায়ানকে সাংসদদের তরফ থেকে এই দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন তিনি। একইসঙ্গে সাংসদদের তার বিধানসভার ৫টা করে ক্যাম্প পরিদর্শন করতেই হবে। ব্লক, অঞ্চলে কথা বলে ২৪ ঘণ্টায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গায়ের জোরে কিভাবে টাকা আটকানো হয়েছে এটা জনসংযোগে বোঝাতে হবে। এ ব্যাপারে বিধায়ক-সাংসদ এক সাথে হলে আরও ভাল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − three =