বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা মেটানোর দাবিতে হাইকোর্টে পেন-ডাউন সরকারি কর্মীদের

বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা মেটানোর দাবি উঠল এবার কলকাতা হাইকোর্টেও। শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে  পেনডাউন করতে দেখা যায় সরকারি কর্মীদের একাংশকে। তাঁদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল তা মেনে অবিলম্বে বকেয়া ডিএর ২৫ শতাংশ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, শীর্ষ আদালত গত ১৬ মে নির্দেশ দিয়েছিল, ছয় সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ডিএর ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে ২৭ জুন। কিন্তু কর্মীদের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত একটি টাকাও হাতে পাননি তাঁরা। এরপরই নতুন করে প্রতিবাদীরা আদালতের দ্বারস্থ হন।

অন্যদিকে শুক্রবার সরকারি সমস্ত দপ্তরে দুপুর ২ টো থেকে ৪ টে পর্যন্ত কর্মবিরতিতে অংশ নেন রাজ্য সরকারি কর্মচারি, পঞ্চায়েত কর্মচারি, স্কুল , কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অধ্যাপকেরাও। যৌথ মঞ্চের ডাকে এই কর্মবিরতি সারা রাজ্যে পালিত হয়েছে এবং তাতে পরবর্তীতে সমর্থন জানিয়েছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ও পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্য মঞ্চ। মূলত বকেয়া মহার্ঘভাতা প্রদান, এসএসসি ২০১৬ পরীক্ষার্থীদের ওএমআর প্রকাশ ও যোগ‍্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নির্ভুল তালিকা প্রকাশ, দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত  চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ, যোগ‍্য অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণ এবং প্রতিহিংসামূলক বদলির আদেশনামা রদের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে এই কর্মবিরতি করা হয়। এই কর্মবিরতিতে সরকারকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সমস্যার সমাধান না হলে আগামী ২৮ শে জুলাই নবান্ন অভিযানে বাংলা স্তব্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে আদালত সূত্রে খবর, হাইকোর্টে এদিনের এই পেন ডাউন কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজ্য কোষাগার থেকে বেতন প্রাপ্ত শ্রমিককর্মচারিশিক্ষকশিক্ষাকর্মী যৌথ মঞ্চ। তাঁদের দাবি, সর্বভারতীয় মূল্যসূচকের নিরিখে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। এদিনের এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায় সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকেও।

এই প্রসঙ্গে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ জানান, ‘রাজ্য সরকার শিক্ষক, কর্মচারি আর বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে আর বিভেদ সৃষ্টি করতে পারবেনা, আজকের কর্মবিরতির সফলতা সেটাই প্রমাণ, আগামীতে আরো স্পষ্ট হবে নবান্ন চলো ২৮ শে জুলাইতে। এরই পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক আশীষ খামরই জানান, ‘সারা ভারতবর্ষের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যিনি সমস্যার সমাধান করেন না, সমস্যাকে জিইয়ে রাখেন রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য।

প্রসঙ্গত, সময়সীমা পেরানোর আগেই সুপ্রিমকোর্টে রাজ্য আর্জি জানায়, বকেয়া ডিএ মেটানোর জন্য আরও ছমাস সময় দেওয়া হোক। একইসঙ্গে রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়, বকেয়া ডিএ দিতে হলে রাজ্যের আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়বে। তাদের দাবি, প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার দায়ভার বর্তাবে রাজ্যের উপর। একাংশ কর্মচারিদের ২৫ শতাংশ ডিএ মেটাতে গেলেও ১০ হাজার কোটির বেশি অর্থের প্রয়োজন, যা ২০২৫২৬ বাজেটে ধরা হয়নি। ফলে ঋণ ছাড়া উপায় নেই, আর কেন্দ্রীয় অনুমতি ছাড়া সে ঋণ নেওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি রাজ্যের তরফে আদালতে এও দাবি করা হয়, ডিএ কোনও মৌলিক অধিকার নয়, বরং তাঐচ্ছিক কেন্দ্রের হারে ডিএ দেওয়ারও কোনও দায় নেই রাজ্যের, কারণ কেন্দ্ররাজ্যের আর্থিক কাঠামো এক নয়। রাজ্যরোপা ২০০৯অনুযায়ী নিজস্ব নিয়মে ডিএ দেয়।আর সরকারি কর্মচারিদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পাল্টা যুক্তি, ডিএ যে আইন স্বীকৃত সেটা সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েও দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + eighteen =