সংগঠনের কাজে হস্তক্ষেপ করিনি, করবোও না, স্পষ্ট বার্তা শুভেন্দুর

সংগঠনের কাজে আগ্রহী নন। সঙ্গে সংগঠনেও হস্তক্ষেপ করেন না বলে দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। হঠাৎ-ই এমন এক বক্তব্য সামনে আসার পর বঙ্গ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। কারণ, লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর থেকেই রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে শুরু হয়েছে কোন্দল। বারবার বিভিন্ন তাবড় তাবড় বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন। চলেছে দড়ি টানাটানি। দায় ঠেলাঠেলি। একাধিকবার দলের সিদ্ধান্তকে ‘দায়ী’ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, খোদ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে বলতে শোনা গিয়েছিল, সব সিদ্ধান্ত তিনি নেন না, কিন্তু রাজ্য সভাপতি হওয়ার দরুন দায় তাঁকেই নিতেই হবে। রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন আকার ইঙ্গিতে এই সকল রাজ্য নেতারা কি বিজেপির ফলাফল খারাপের পিছনে আঙুল তুলছেন শুভেন্দু অধিকারীর দিকে? আর সেই কারণেই কি অভিমান হয়েছে বিরোধী দলনেতার, এই প্রশ্নই ঘুরছে বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে। সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠছে তবে কি বিরোধী দলনেতার তাঁর কৌশলী বার্তায় বোঝলেন যে তিনি সংগঠনের কাজে আগেও হস্তক্ষেপ করেননি?

কারণ, শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘আমাকে যেখানে প্রচার করতে যেতে বলা হয় সেখানে যাই। সংগঠিত করার কাজ আমার নয়। কেবলমাত্র আমার জেলাতে পার্টির সংগঠনের নেতারা রাজ্যের নির্দেশিকাও যেমন পালন করেন, আমার পরামর্শও মেনে চলেন। এর বাইরে সাংগঠনিক ব্যাপারে আমি কোনও দিন হস্তক্ষেপ করি না।’ একদিকে, যখন সুকান্ত মজুমদারকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘সিদ্ধান্ত হয়ত অন্য কেউ নেবে। তবে দায় আমাকেই নিতে হবে।’ সেখানে আবার বিরোধী দলনেতাও বলছেন, সংগঠনের কোনও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর কাজ নয়। ফলে খারাপ ফলাফলের দায় ঠিক কার তা স্পষ্ট না হওয়ায় দায় ঠেলাঠেলি অব্যাহত।

বর্তমানে বঙ্গ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি পদে রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তবে সদ্যই তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন। বিজেপি-র সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী একজন যেহেতু দুই পদে থাকতে পারেন না, সেক্ষেত্রে কে হতে পারেন বঙ্গ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তা নিয়েও একটা জল্পনা চলছেই। এদিকে রাজ্য সভাপতির দৌড়ে প্রথমেই নাম আসছে শুভেন্দু অধিকারীর। তাঁর পরিশ্রম, তৃণমূল বিরোধিতার চড়া সুর এই লড়াইয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়ককে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে। কিন্তু ভোটের ফলাফলের পর থেকেই দেখা গিয়েছে, একাধিক রাজ্য বিজেপি-র প্রথম সারির মুখ প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন। বিশেষ করে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে দিলীপ ঘোষের পরাজয়ের পর প্রথমেই মেদিনীপুর থেকে তাঁকে সরিয়ে কেন কেন্দ্র বদল করা হল সেই প্রশ্ন খোদ দিলীপ যেমন করেছেন, পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন সৌমিত্র খাঁ, জগন্নাথ সরকাররা। এই প্রসঙ্গেই শুভেন্দু জানান, ‘সাংগঠনিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না, ভবিষ্যতেও করার কোনও ইচ্ছা নেই।’ ফলত, যে সময় রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা নিয়ে চর্চায় প্রথমেই শুভেন্দুর কথা উঠে আসছে সেখানে তিনি রাজ্য় সভাপতি হতে চান না একথাই কি বুঝিয়ে দিয়েছেন এই মন্তব্যে? রাজনীতির কারবারিরা তেমনটাই কিন্তু অনুমান করছেন।

পরাজয়ের পর দিলীপ ঘোষকে একদিকে যেমন বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘কিছু তো আছেই। পার্টির পুরনো প্রতিষ্ঠিত নেতাদের হারানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল? লোকে হারা সিট জেতার জন্য প্ল্যানিং করে। এখন তো মনে হচ্ছে জেতা সিট হারানোর জন্য প্ল্যানিং হয়েছে।’ আবার জগন্নাথ সরকারও জানিয়েছেন, মনোনয়ন জমার আগের দিন কেন্দ্র বদল করা হয়েছে। অন্যদিকে সৌমিত্র খাঁ আরও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ‘২৫ জনের কোর কমিটির মধ্য ২০ জন অযোগ্য। দল ভোগ করছে। দিলীপদার লড়াকু মনোভাব ও মুকুল রায়ের রণনীতির যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা আগে ১৯টা সিট পেয়েছিলাম। দিলীপ ঘোষের মুখ ছিল। দুটো কাজ হয়েছে। এখানে শুভেন্দুদা আছেন। কিন্তু তাঁর পিছনে যাঁরা আছে তাঁদের তো আমাদের কাজ করতে হবে।’

ফলত, এখানেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, হয়তো ঘুরিয়ে নাক ধরতে চাইছেন বঙ্গ বিজেপির প্রথম সারির নেতারা। নাম না করেই খারাপ ফলের দায়ভার ঠেলছেন শুভেন্দুর দিকে। অথবা কোনওটাই নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − three =