বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে দেশজুড়ে। গোটা দেশজুড়ে একই সময়ে কেন দেশের বাইরে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হল কেন বা বাংলায় কথা বললেই তাদের বের করে দেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগ কেন তা নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক মামলায় কেন্দ্রকে এই প্রশ্নই করলেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। পাশাপাশি, বাংলায় কথা বললেই কাউকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হচ্ছে, এই অভিযোগ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে আদালত। পাশাপাশি আদালত এও জানায়, একই সময়ে সব রাজ্যে এই অভিযান হলে তার পেছনে তো কেন্দ্রীয় স্তরে সমন্বয় থাকে। সেটাই জানতে চাই। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘অভিযোগ উঠছে, বাংলায় কথা বললেই অনেককে আটক করা হচ্ছে। এটা হলে কিন্তু সমাজে ভুল বার্তা যাবে। এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।‘
বাংলাদেশি সন্দেহে ভিন রাজ্যে আটকে রাখা হচ্ছে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের। এ নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে বাংলায় ঠিক সময়েই ক’দিন আগে দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক করা নিয়ে দু’টি পরিবার মামলা করে কলকাতা হাইকোর্টে। এই মামলার শুনানিতে আগেই রাজ্যের মুখ্যসচিব ও দিল্লির মুখ্যসচিবকে সমন্বয় করে আদালতে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলেছিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। এবার এদিনের শুনানিতে তুলে দিলেন আরও গুরুতর প্রশ্ন। তা নিয়েই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বিচারপতির স্পষ্ট কথা, আপনারা খোঁজ নিন, আমরা সমাধান খুঁজতে চাই।
এদিনের শুনানিতে রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোরাল সওয়াল করতে দেখা যায়। সওয়াল জাবাবের মধ্যেই দিল্লির কেস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দিল্লির কেস ভয়ঙ্কর। আমরা তদন্ত করে দেখেছি। ওরা এখানে থাকত। আমাদের স্বরাষ্ট্র সচিব এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছেন।’ যদিও পাল্টা যুক্তি ছাড়েনি কেন্দ্রও। এই মামলায় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আদালতে সওয়াল করেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল ধীরজ ত্রিবেদী ও অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি জম্মু–কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলার পরে কিছু সন্দেহজনক গতিবিধির ভিত্তিতে কিছু মানুষকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তবে সবাইকে নয়। ধীরজ ত্রিবেদী জানান, মোট ১৬৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৫ জন স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা বাংলাদেশি নাগরিক। বাকিদের যাচাই করা হচ্ছে। যাঁদের বিরুদ্ধে নিশ্চিত তথ্যপ্রমাণ নেই, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে মামলাকারীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, এই একই বিষয়ের উপর দিল্লি হাইকোর্টে আগে থেকেই একটি মামলা চলছে। অথচ সেই তথ্য গোপন রেখে কলকাতা হাইকোর্টে একই বিষয়ে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। কেন্দ্রের আইনজীবীদের বক্তব্য, ‘আদালতের সামনে ভুল তথ্য পেশ করা হয়েছে। মামলাকারীরা দিল্লির মামলার কথা ইচ্ছাকৃতভাবে বলেননি।‘