রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি কবে জারি করবে রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে দু‘সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে–র ডিভিশন বেঞ্চের। রাজ্যকে কার্যত ‘ডেডলাইন’ ধরিয়ে দিল বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।বহুকাল বালাই নেই নির্বাচনের। ইউনিয়ন রুম যেন অলিখিত ক্ষমতাবলেই ‘দখল’ নিয়েছে শাসক শিবিরের ছাত্র নেতারা। এই পরিস্থিতিতে বারংবার উঠেছে অভিযোগ। আর এর প্রতিফল ন হিসেবে সাম্প্রতিককালে নির্বাচনের দাবিতে, শিক্ষামন্ত্রীকে ঘেরাও করতে দেখা গিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও। আবার নির্বাচন না হওয়ার কারণেই ক্ষমতার ‘একচেটিয়া’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল কসবা–কাণ্ডে ধৃত মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধেও। এই একাধিক প্রসঙ্গগুলিকে ঘিরে রয়েছে একটি ইস্যু, তা হল ছাত্র পরিষদ নির্বাচন। এবার সেই সূত্র ধরে আদালতেও উঠল ‘নির্বাচন প্রসঙ্গ’।
প্রায় বছর দশেক ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন কেন করা হচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই মামলার শুনানিতেই আজ এই নির্দেশ দেয় আদালত । বিচারপতি সৌমেন সেন এদিন রাজ্যকে বলেন, সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গর্ভনিং বডিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। এছাড়াও গর্ভনিং বডিগুলিতে শিক্ষাবিদদের রাখা প্রয়োজন। যাদের থেকে পড়ুয়ারাও কিছু শিখতে পারবে। পাশাপাশি, বিচারপতি সৌমেন সেনের নির্দেশ, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য রয়েছে, সেখানে যত দ্রুত সম্ভব ছাত্র সংসদের নির্বাচন করাতে হবে। জবাবে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর নেই। বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে দিয়ে কাজ চলছে। এটা রাজনৈতিক নিয়োগ। আমরা এই সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ করছি।’ তবে রাজ্য পক্ষের এই দাবি কার্যত মানতে নারাজ বিচারপতি সৌমেন সেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কল্যাণ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যরা কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।’ সব শেষে রাজ্য নির্বাচন নিয়ে সময় মতো বিজ্ঞপ্তি জারি করুক, এই নির্দেশই বহাল রাখে আদালত।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে কসবার আইন কলেজের ঘটনা সামনে আসার পর কলকাতা হাইকোর্ট গোটা রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন রুম বিজ্ঞপ্তি জারি করে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। বছরের পর বছর সেখানে নির্বাচন না হলেও কীভাবে ছাত্র ইউনিয়ন রুমগুলো চলছে, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল হাইকোর্ট। ছাত্র ইউনিয়ন রুম বেআইনি কাজকর্মের আখড়া হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এরপরই বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে–র ডিভিশন বেঞ্চ গত ৩ জুলাই নির্দেশ দেয়, সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ইউনিয়ন রুম বন্ধ করে দিতে উচ্চশিক্ষা দপ্তরকে নোটিশ জারি করতে হবে। কর্তৃপক্ষ ওই রুম তালা বন্ধ করে রাখবে। কোনও রকম রিক্রিয়েশনের জন্য ওই রুম ব্যবহার করা যাবে না। ইউনিয়ন রুম খোলার জন্য জরুরি কোনও প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে যথাযথ কারণ জানিয়ে চিঠি দিয়ে আবেদন করতে হবে বলে জানায় আদালত।