ক্যান্সার ওষুধের শুল্কে অব্যাহতি দেওয়ায় কতটা উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ, উঠছে প্রশ্ন

২০২৪-২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে তিনটি ক্যান্সারের ওষুধে শুল্কে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। ওষুধ তিনটি হল, ট্রাস্টুজুমাব ডেরক্সটেকান, ওসিমেরটিনিব এবং দুরভালুমাব। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার আগে, এই তিনটি ওষুধের আমদানিতে ১০ শতাংশ করে শুল্ক দিতে হত। এই শুল্ক ছাড়ের ঘোষণায় সত্যি সত্যি কি লাভবান হবেন ক্যান্সার রোগীরা তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এক্ষেত্রে আগে জেনে নেওয়া দরকার এই ওষুধগুলি কীভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাহায্য করে সে ব্যাপারে।

ট্রাস্টুজুমাব ডেরক্সটেকান: এটি একটি মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। এইচইআর-২ রিসেপ্টর আছে এমন স্তন এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এই ওষুধের প্রতি শিশির দাম পড়ে প্রায় ১.৬ লক্ষ টাকা। মহিলাদের ক্যান্সার ক্ষেত্রে স্তনের ক্যান্সারেই সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়।

ওসিমেরটিনিব: নির্দিষ্ট ধরণের ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসায় লাগে এই ওষুধ। ক্যান্সার কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, এমন একটি প্রোটিনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয় এটি। ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা করা সবচেয়ে কঠিন। পুরুষদের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সার হল দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক। ওসিমেরটিনিবের প্রতি স্ট্রিপের দাম প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা। একেকটিস্ট্রিপে দশটি করে বড়ি থাকে।

দুরভালুমাব: এটি একটি ইমিউনোথেরাপি ড্রাগ। এটি একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনকে ব্লক করে। যার ফলে ক্যান্সার কোষকে আক্রমণ করতে সুবিধা হয় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার। নির্দিষ্ট ফুসফুস এবং মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয় এই ওষুধটি। এছাড়া, যকৃত এবং পিত্তথলির ক্যান্সারের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০ মিলিলিটারের দাম পড়ে প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা।

এই তিনটি ওষুধের পেটেন্টই রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার হাতে। যারা অস্কফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোভিডের টিকা তৈরি করেছিল। অ্যাস্ট্রাজেনেকাই এই তিনটি ওষুধ তৈরি করে এবং ভারতে রফতানি করে।

এই ব্যয়বহুল ওষুধগুলির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক ছাড় মানে, রোগীদের উপর আর্থিক বোঝা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমবে। ওষুধগুলি পেটেন্টের অধীনে থাকায়, ভারতে এগুলি তৈরির উপায় নেই। তাই অনেক খরচ করে এগুলি বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এগুলি সবই ইমিউনোথেরাপির ওষুধ। নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের জন্য অন্যান্য উপলব্ধ থেরাপিগুলির তুলনায় অনেক ভাল কাজ দেয়। দিল্লি এইমস-এও রোগীদেরও এই থেরাপিগুলি দেওয়া হয়। তবে, তিনটি ওষুধের দামই সাধারণত এক লক্ষ টাকার বেশি থাকে। ডোজ অনুযায়ী প্রত্যেক রোগীর প্রতি মাসে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তাই, দাম সামান্য কমলেও রোগীদের অনেকটাই লাভ হবে। সেদিক থেকে আমদানী শুল্কে ১০ শতাংশ ছাড়ের সিদ্ধান্তে রোগীরা খুবই উপকৃত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 3 =