উত্তরকাশীর ধসে পড়া সিল্ককিয়ারা সুড়ঙ্গে এখনও আটকে ৪১ জন শ্রমিক। তাঁদের উদ্ধারের জন্য দু-সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে খননকাজ চালানো হচ্ছে। অগার মেশিন বিকল হয়ে যাওয়ায় রবিবার থেকে হাতে করে খননকাজ শুরু হয়েছে। আর এই খননে উঠে আসা বিপুল বর্জ্য জমে নতুন বিপদের অশনি সংকেত দিচ্ছে। শুধু খননকাজে উঠে আসা বর্জ্য নয়, সুড়ঙ্গ নির্মাণের সময়ও বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জমা হয়েছে। যা আদতে একটা বর্জ্যের পাহাড়ের আকার নিয়েছে বলাই শ্রেয়। আর এখানেই নতুন এক বিপদের আঁচ দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করতে যেভাবে কাজ করা হচ্ছে, সেটা কাচের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করার সামিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য। ক্রমাগত পাহাড়ের কোলে খননকাজ চালানোর ফলে যে কোনও সময় পাহাড় যে কোনও চমক দেখাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
চার ধাম প্রকল্পের অধীনে তৈরি হচ্ছিল সিল্ককিয়ারা সুড়ঙ্গ। পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছিল। সেটা করতে গিয়ে যে বর্জ্য উঠে এসেছে, সেটা জমতে-জমতে পাহাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সেটা আটকানোর জন্য আলাদা কোনও প্রাচীর দেওয়া হয়নি। ফলে ভারী বৃষ্টি হলে সেই বর্জ্যের পাহাড়ে ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সেটা হলে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জনবনসতি এলাকায় ভেসে যেতে পারে। আর তা হয়ে উঠতে পারে খুবই ‘বিপজ্জনক’, এমনটাই ধারনা বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে যে কোনও নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম রয়েছে। যেখানে নিয়ম মেনে বর্জ্য নিষ্কাশনের কথা বলা হয়েছে। যাতে কোনভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট না হয়। কিন্তু, সিল্ককিয়ারা সুড়ঙ্গ নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি বলে জানাচ্ছেন উত্তরাখণ্ড কৃষি ও অরণ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এসপি সতী। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘বর্জ্যের পাহাড় আশপাশে কোনও প্রাচীর নেই, যা খুব বিপজ্জনক। বিশেষত, বর্ষার সময়। এই বর্জ্য নীচের দিকে ভেসে যেতে পারে এবং ঝরনা বা নদীর জলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে। সেক্ষেত্রে জনবসতি কাদাজুলে ডুবে যেতে পারে।’
এদিকে সমগ্র ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব ড. সুধীর কৃষ্ণ। সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে এখন আমাদের ভাবনার সময় এসেছে। অনেক দেরি করে ফেলেছি। আর দেরি করা উচিত নয়।’
সিল্ককিয়াারা সুড়ঙ্গের পাশের এই নয়া বিপদ নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় প্রশাসনও। তবে আপাতত সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের উদ্ধারকাজ নিয়ে ব্যস্ত। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সদস্য বিশাল চৌহান জানান, ‘হিমালয়ের ভৌগোলিক অবস্থা অনেকটাই আলাদা। কী হবে আগে থেকে বোঝা যায় না। পরিবেশ সংক্রান্ত পরীক্ষার পরেই প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে এখন যে প্রশ্ন উঠেছে সেটা উদ্ধারকাজের পর বিবেচনা করা হবে।’