পুলিশের চাকরির ইন্টারভিউয়ের আগেই কিছু পরীক্ষার্থীর হোয়াট্সঅ্যাপে পৌঁছেছিল গোপন খবর। কারা ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকবেন, কারা প্রশ্ন করবেন, সেই তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে সামনে আসে। মেধাতালিকা প্রকাশের পরেও দেখা যায় বেশ কিছু অনিয়ম রয়েছে। সেই অনিয়মের অভিযোগ এনে ৮৪১৯ জন পুলিশ কনস্টেবলের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে কলকাতাহাই কোর্টের দ্বারস্থ হন পুলিশ কনস্টেবল পদের চাকরিপ্রার্থী সম্পদ মণ্ডল সহ বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থী। কারণ, ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর সল্টলেকের অফিসে ৮৪১৯ জনের যে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয় তাতে দেখা যায়, ওই তালিকায় স্থান পাননি মামলাকারীরা। এমনকি, প্রার্থীদের লিখিত এবং ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বরেরও উল্লেখ ছিল না মেধাতালিকায়। সংরক্ষিত প্রার্থীদের জন্য কোনও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। অর্থাৎ সংরক্ষণ নীতিও মানা হয়নি মেধা তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে। এর পরে বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা নিজেদের নম্বর ছাড়া আর কারও নম্বর দেখতে পাননি। ফলে কেউ নিজের নম্বর অন্যদের সঙ্গে তুলনা করতে পারেননি। যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের নম্বর সম্পর্কেও জানা যায়নি ওয়েবসাইট থেকে। এ ছাড়াও চাকরিপ্রার্থীদের প্রাপ্ত মোট নম্বর দেখা গেলেও বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিভাজন ছিল না ওয়েবসাইটে। মামলাকারীরা তাই অভিযোগ করেন, সরকারি চাকরির নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। মামলাকারীরা এ-ও বলেন যে, কনস্টেবলের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম ১৬৭ সেমির কম উচ্চতা রয়েছে, এমন অনেককেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। নিয়োগে স্বজনপোষণ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। বুধবার এই মামলার রায় ঘোষণা করল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগকে মান্যতা না দিলেও আদালতের রায়ে কয়েকশো পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মোট দু’টি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথম মেধাতালিকাটি প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালের ২৬ মার্চ। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন মামলাকারীরা। পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের বিরুদ্ধে তারা মামলা করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালে। ট্রাইবুনাল পুলিশ কনস্টেবলদের নিয়োগ সংক্রান্ত ত্রুটি শুধরানোর নির্দেশ দিয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে। এর পরেই প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় মেধা তালিকা। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষণের নিয়ম মেনে সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়। নতুন করে চাকরিও পান অনেকে। কিন্তু বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট এই দ্বিতীয় তালিকাটি খারিজ করে প্রথম তালিকাটিকেই মান্যতা দিয়েছে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে স্যাট বা স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা-ও খারিজ করে। এই প্রসঙ্গে বোর্ডের যুক্তি ছিল, নিয়োগে সংরক্ষণ নীতি মানা হয়েছে। কিন্তু যে সব সংরক্ষিত প্রার্থী সাধারণ প্রার্থীর সমতুল্য এবং বেশি নম্বর পাবেন মেধাতালিকায় তাঁদের সাধারণ প্রার্থী হিসাবেই গণ্য করা হবে। কিন্তু বোর্ডের ওই প্যানেল বাতিল করে দেয় স্যাট। তারা জানায়, সাধারণ এবং সংরক্ষিত প্রার্থীদের আলাদা ভাবে নতুন প্যানেল প্রকাশ করে নিয়োগ করতে হবে। এর পরে স্যাটের রায় মেনে কনস্টেবল পদে ক্যাটাগরি ভাগ করে চাকরি দেয় বোর্ড। সাধারণ এবং সংরক্ষিতদের জন্য আলাদা মেধাতালিকার ভিত্তিতে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়া হয়। ফলে চাকরিতে বেশি সংখ্যক সাধারণ প্রার্থী সুযোগ পান। কিন্তু বুধবার হাই কোর্ট স্যাটের ওই রায়কে খারিজ করে দিল। পুরনো প্যানেলই বহাল রাখল হাই কোর্ট। আর এতেই দ্বিতীয় তালিকায় চাকরি পাওয়া কনস্টেবলদের চাকরি যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আপাতত কয়েকশো কনস্টেবলের চাকরি বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনুমান। তবে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, বকেয়া শূন্যপদে মেধার ভিত্তিতে নতুন করে নিয়োগ করা যেতে পারে।