ধর্মতলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিজে চোখে না দেখলেই যেন নয়।রবিবার সন্ধেয় স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সেই প্রস্তুতি দেখতে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির হন ধর্মতলায়। কথা বলেন অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার সঙ্গে। মমতা বললেন, ‘প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আমাদের সহকর্মীরা দূর দূরান্ত থেকে এসেছেন। ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ এসেছে। প্লাবনের কারণে অনেকে আসতে সমস্যা হচ্ছে। তবে প্রাণের টানে, শিকড়ের টানে আসছে।‘
অন্যদিকে এই ২১–এর সমাবেশ ঘিরে রাজ্যের নানাপ্রান্ত থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড়ে থিকথিক করে ধর্মতলা চত্বর। বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল করে তাঁরা আসেন ধর্মতলার সভাস্থলে। আর ২১-এর এই সভাকে ঘিরে তাঁর বক্তব্য, ‘বছরে একটাই অনুষ্ঠান হয় শহিদ স্মরণে, তাতেও অনেকের আপত্তি আছে। কর্মী–সমর্থকরা আসুন, ঝর–জল থাকলেও শহিদদের স্মরণ করুন।’
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের জেরে শহরের জনজীবন ব্যাহত হতে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বামপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন। শুক্রবার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কলকাতা শহরে যাতে কোনও যানজট না–হয়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে পুলিশকে।
শুধু তাই নয়, এই প্রথম ‘রাস্তা আটকে’ ২১ জুলাইয়ের সভা ঘিরে কড়া পর্যবেক্ষণ রেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন সভামঞ্চের সামনে দাঁড়িয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের গুলিতে দলের কর্মীদের শহিদ হওয়ার ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “বছরে আমরা একটাই অনুষ্ঠান এখানেই করি কারণ এখানেই অনেকগুলো প্রাণ গিয়েছিল। রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। যাদের আপত্তি আছে তাদের আমি বলি যখন তারা নবান্ন অভিযান করে পুলিশের অনুমতি ছাড়া তখন আপত্তিটা কোথায় থাকে? আমাদের প্যারালাল প্রোগ্রাম করতে গিয়ে তাদের প্রোগ্রাম করতে হয়। কই তাদের যখন সেন্ট্রাল প্রোগ্রাম থাকে আমরা তো প্যারালাল প্রোগ্রাম করি না।’ সঙ্গে এও বলেন, ‘কথায় কথায় বাঙালিদের ওপর অত্যাচার। বাংলা ভাষা বলায় অত্যাচার মানব না আমরা।‘
এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে এ দাবিও করতে শোনা যায়, ‘আগে মানুষ ভোট দিতে পারতেন না। মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং তালা বন্ধ করে রাখত ভোটে। গণতন্ত্র স্তব্ধ করে রাখতো। ১৩ জন মারা যান। ১৫০ জন পুলিশ আহত হন। নো আইডি কার্ড, নো ভোট সেশনের সময় থেকে শুরু হয়। এরপর থেকে মানুষ ভোট দেওয়ার অধিকার পায়।‘
পাশাপাশি তাঁর দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বার্তা, ‘সবার কাছে আবেদন শান্তিপূর্ণ ভাবে আসুন। ২১ জুলাই চিরকাল চলবে। কোনওদিন বন্ধ হবে না। আপনারা চিরকাল আসবেন। ঝড়–বর্ষার দিন। প্রোগ্রাম শেষের দুই ঘণ্টার মধ্যে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়। অন্য দল প্রোগ্রাম করে ক্ষতি করে চলে যায়।‘ পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমো আশাবাদী, ‘মানুষের কাল একটু অসুবিধা হতে পারে। কালকেও প্রচুর মানুষ আসবেন। সবাইকে বলব প্রশাসনকে সাহায্য করুন। আর প্রশাসনকে বলব তিন কিমি আগে দাঁড় করাবেন না। ব্রিগ্রেডে প্রচুর জল হয়ে গেছে। বেশি কাদায় ঢুকলে গাড়ি আটকে যাবে। তাই সেদিকে খেয়াল রাখবে ট্রাফিক বিভাগ। জল ছাড়া হয়েছে প্রচুর। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান হবে। লোয়ার দামোদর বেসিন নিয়ে প্রকল্প হবে। আমরা আমাদের পরিকল্পনা মতো করব।‘