আরজি কর কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত কঠোর বার্তা দিলেও বিরোধীরা শাসকদলকে বিঁধতে ছাড়ছেন না। একইসঙ্গে বিদ্ধ করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রীকেও। কারণ, তিনি যেমন মুখ্যমন্ত্রীও বটে, ঠিক তেমনই স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ মন্ত্রী দুয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। আর সেই কারণেই বিরোধীরা তথা বামেরা আঙুল তুলছেন তাঁরই দিকে। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের দাবি, ‘তাঁর নেতৃত্বেই দালালরাজ তৈরি হয়েছে। সেখানে কেউ নিরাপদ নয়। কাউকে প্রতিবাদ জানাতে দেওয়া হচ্ছে না। যেখানেই প্রতিবাদ হয়, বলা হচ্ছে লাল ঝাণ্ডা থাকবে না। বাকিরা চুপিচুপি বোঝাপড়া করে নেবে। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব।’ শনিবার আরজি কর হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই কর্মীদের মারধর করে পুলিশ। পুলিশি জুলুমের শিকার হন ছাত্রী এবং যুবতীরাও। সরাসরি কিল চড় ঘুঁষি মারতে দেখা যায় পুলিশ বাহিনীকে। প্রতিবাদ থামেনি। এরপরই হাসপাতালে গেটের মুখে বিক্ষোভ দেখায় সিপিআই(এম)। সেখানেই বক্তব্য রাখেন সেলিম।
সেলিম হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘পুলিশমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনিই মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে দালালরাজ তৈরি হয়েছে। সেখানে কেউ নিরাপদ নয়। এই ভয়াবহ ঘটনা হতে পারে যে কারো পরিবারে।’ সেলিম বলেন, ‘তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা এবং মদতে চলা দুষ্কৃতীবাহিনী দুর্নীতি রাজ চালাচ্ছে।’ সেলিমের প্রশ্ন, ‘কেন হাসপাতালে, বিশেষ করে, মহিলা চিকিৎসকদের বিশ্রাম নেওয়ার ঘর নেই। পুলিশকে পাঠিয়ে মমতা কেন প্রথমে বলালেন যে আত্মহত্যা। পুলিশ কমিশনার হাসপাতালে আসার আগেই কেন আত্মহত্যা বলেছিলেন।’
আরজি কর হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ডিউটিতে ছিলেন মহিলা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি চিকিৎসক। পরদিন সকালেই তাঁর রক্তাক্ত দেহ মেলে এমারজেন্সির সেমিনার কক্ষে। সারা শরীরে দশ জায়গায় মারাত্মক আঘাতের প্রমাণ ময়না তদন্তে মিলেছে। ভেঙে গিয়েছে গলার হাড়। মারাত্মক নিপীড়ন এবং খুনের চিহ্ন মিলেছে রক্তাক্ত সারা শরীরে। শনিবার সারা রাজ্যে চলছে বিক্ষোভ।একইসঙ্গে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ রয়েছে। শুক্রবার আরজি কর হাসাপাতলে ছিলেন ছাত্রযুব কর্মীরা। নিহত চিকিৎসকের দেহ নিয়ে চলে যাচ্ছিল গাড়ি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগে সরব ছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাস। ছাত্র-যুবরা গাড়ি আটকে বসে পড়েছিলেন।
সেলিম বলেন, ‘‘তৃণমূল মুক্তাঞ্চল করেছে। বামপন্থী ছাত্রযুবরা হাসপাতালে ঢুকতে পারবে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করলে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রিন্সিপাল নিজে অপরাধী। তাঁকে সরাতে হবে।’’
আরজি কর হাসপাতাল থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত বিক্ষোভ সিপিআই(এম) এর। উপস্থিত ছিলেন সেলিম, রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদার, রাজ্য কমিটির সদস্য তরুণ ব্যানার্জি, সুদীপ সেনগুপ্ত, কনীনিকা ঘোষ বোস, ফৈয়াজ আহমেদ খান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।