আদালতে গরহাজির আইআইএম জোকার নির্যাতিতা, ঘটনার ছত্রে ছত্রে বৈপরীত্য বাড়াচ্ছে ধোঁয়াশা

আদালতে গরহাজির আইআইএম জোকার নির্যাতিতা তরুণী।সোমবার তাঁর গোপন জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও আদালতে দেখা মেলেনি তাঁর।কিন্তু কেন তিনি আসেননি এই গোপন জবানবন্দি দিতে তা অজানা।এদিকে নির্যাতিতার বাবার যে বক্তব্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিলেন সরকারি আইনজীবী।

এদিকে ইচ্ছাকৃতভাবেই ঘুমের ওষুধ পানীয়র সঙ্গে মিশিয়েছিলেন, এমনটাই স্বীকার করে নিয়েছেন তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আইআইএমকলকাতার ছাত্র, এমনটাই জানালেন কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক। সঙ্গে এও জানান, তদন্তকারীদের সামনে অভিযুক্ত ছাত্র স্বীকার করেছেন, তিনি আইআইএম ক্যাম্পাস সংলগ্ন একটি ফার্মাসি থেকে ঘুমের ওষুধ কিনেছিলেন। এরপর  তা ঠাণ্ডা পানীয় ও জলের সঙ্গে মিশিয়ে তরুণীকে খাওয়ান। ঘটনার দিন ওই তরুণী তাঁর হস্টেলের ঘরে যান।  এবং সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এই স্বীকারোক্তির মধ্যেও একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। কেন তিনি ঘুমের ওষুধ খাওয়ালেন, তার কোনও যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা অভিযুক্ত দিতে পারেননি। পুলিশের প্রশ্ন, কাউন্সেলিংয়ের জন্য আসা কোনও তরুণীর সঙ্গে এই ধরনের আচরণের নেপথ্যে কী উদ্দেশ্য ছিল, সে বিষয়ে অভিযুক্ত স্পষ্ট নন।

এদিকে ঘটনায় জটিলতা আরও বেড়েছে অভিযোগকারিণীর পরিচয় নিয়ে। তিনি নিজেকে মনোবিদ বলে দাবি করলেও, এখনো পর্যন্ত কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর বা চেম্বারের প্রমাণপত্র দিতে পারেননি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ার কোনও সার্টিফিকেটও নেই বলেই দাবি পুলিশের। তিনি আদৌ মনোবিদ কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর মিলছে না প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। তাঁরা জানাচ্ছেন, এমন কোনও বিষয়ে নির্যাতিতা পড়াশোনা করেছেন বা করছেন বলে তাঁরা শোনেননি। তদন্তে উঠে এসেছে, নির্যাতিতার বাবার বক্তব্যেও কিছু অমিল আছে। এমনকি তাঁরা কোনও চাপের মধ্যে পড়ে তাদের অবস্থান বদলেছেন কিনা, বা কোনও আর্থিক সমঝোতা হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আইআইএম জোকা কাণ্ডে তদন্তে এবার  ৯ সদস্যের সিট গঠন করেছে রাজ্য সরকার।  একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দলটি। এই দলের সামনে এখন অনেকগুলি প্রশ্ন রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, শুক্রবারে রাতে ওই তরুণী হস্টেলে ঢুকলেন কী করে তা নিয়েও। একইসঙ্গে এও বলা হচ্ছে তরুণীকে রেজিস্টারে সই করানো হয়নি। সেক্ষেত্রে কার নির্দেশে সই করেননি তিনি তাও জানার চেষ্টা চলছে। এর পাশাপাশি দেখা হচ্ছে এই অভিযুক্ত দ্বিতীয় বর্ষের ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া ঠিক কতটা প্রভাবশালী তাও। এর পাশাপাশি এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জোকা আইআইএমএ মনোবিদকে যৌন নির্যাতনে এবার তদন্তকারী অফিসারদের নজরে অভিযুক্ত পরমানন্দ তোঁয়াওয়ারের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলও। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে অভিযুক্ত পরমানন্দর কোনও মানসিক সমস্যা ছিল না। তাহলে তরুণী মনোবিদকে কাউন্সেলিংয়ের কথা বলে কেন ক্যাম্পাসে ডেকেছিলেন পরমানন্দ। অভিযুক্তর পরিবারের সদস্যদের হরিদেবপুর থানায় ডেকে মানসিক সমস্যার কোনও পুরনো রেকর্ড রয়েছে কিনা জানতে চান তদন্তকারী আধিকারিকেরা। ইতিমধ্যে হস্টেলের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছে পুলিশ। ওই তরুণী ক্যাম্পাসে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, তা জানতে চান তদন্তকারী আধিকারিকেরা। রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে তরুণী আইআইএমর হস্টেলে ঢুকেছিলেন। হস্টেলের যে ঘরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে , সেই রুম সিল করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে নুমনা সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই অভিযুক্তের পোশাক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ধৃত ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়ার মেডিকো লিগাল টেস্ট করানো হবে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে।

এদিকে ওই তরুণী অভিযোগ করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হওয়ার পর কাউন্সেলিংয়ের জন্যই তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত। লাঞ্চে দেওয়া পিৎজা এবং জল খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপই  তাঁকে যৌন নির্যাতন করা হয়।  আইআইএম জোকা ক্যাম্পাসে ওই তরুণী মনোবিদ ছিলেন ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। ধর্ষণের ঘটনায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আইআইএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারিণী একসঙ্গে বাইরে থেকে একটি ক্যাব ধরে ক্যাম্পাসে আসেন। ক্যাম্পাসের নিয়ম মেনে সিকিউরিটি অফিসারকে আগাম মেল করে অভিযুক্ত জানিয়েছিল যে, তার এক বন্ধু দুপুরে ক্যাম্পাসে আসছেন। ক্যাম্পাসের নিয়ম মেনে সিকিউরিটি অফিসারকে আগাম মেল করে অভিযুক্ত জানিয়েছিল যে, তার এক বন্ধু দুপুরে ক্যাম্পাসে আসছেন। বিকেল ৩টে ১০ মিনিট নাগাদ তরুণী ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে একটি ক্যাব বুক করে বেরিয়ে যান।এদিকে, কেনইবা অভিযুক্ত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রেরমনোবিদদরকার হল, তা নিয়ে পুলিশ সন্দিহান। আবার অভিযোগকারিণী সত্যিই পেশাদারমনোবিদকি না, তিনি কোথা থেকে কোর্স করেছেন, তা পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। তাহলে অভিযোগকারিণীর বাবা কেনস্টাডি মেটেরিয়াল’-এর জন্য আইআইএম জোকায় তাঁর মেয়ে যান বলে দাবি করেন, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ফলে সব মিলিয়ে আইআইএম জোকায় হস্টেলে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে তৈরি হচ্ছে বহু অসঙ্গতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 13 =