কুস্তি থেকে দেশকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দিয়েছেন ২১ বছরের আমন। জীবনের প্রথম অলিম্পিক্স। কিন্তু দেখে মনে হয়নি একবারও। প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়েছেন। যেন প্রতিজ্ঞা করে এসেছিলেন, পদক নিয়েই ফিরব। আমনের ব্রোঞ্জ জয় কোনও সাধারণ পদক জয়ের আখ্যান নয়। এর পিছনে রয়েছে ঘামে, রক্তে ভেজা ইতিহাস। তিনি এখন অলিম্পিক্সে পদক জয়ী সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয়। দিল্লির ছত্রশাল স্টেডিয়ামে ঘষে মেজে তৈরি করা হয়েছে তাঁকে। এই মাটি বীরের মাটি। এখান থেকেই বেরিয়েছেন সুশীল কুমার, যোগেশ্বর দত্ত, রবি কুমার দাহিয়া, বজরং পুনিয়াদের মতো অলিম্পিক্স পদকজয়ীরা।
২০০৩ সালের ১৬ জুলাই হরিয়ানার ঝাজ্জর জেলার বিরোহর গ্রামে জন্ম আমন শেরায়তের। প্রচণ্ড কষ্টে কেটেছে ছোটবেলা। মাত্র ১১ বছর বয়সেই মা-বাবা দু’জনকেই হারান। সঙ্গী বলতে ছোট বোন। তবে বটগাছের মতো ছায়া দিয়ে গিয়েছেন কাকা সুধীর শেরয়াত। তাঁর হাত ধরেই আমনের জীবন বদলে যায়।তারপর থেকে কাকার কাছে বড় হয়েছেন তিনি।
এরপর প্যারিস অলিম্পিকে তাঁর প্রথম পা ফেলা। কুস্তিতে পুরুষদের ৫৭ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক জিতে ভারতের তারকা শাটলার পিভি সিন্ধুর এক রেকর্ডও ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন আমন। কারণ, এর আগে রিও অলিম্পিকে ২০১৬ সালে ২১ বছর ১ মাস ১৪ দিন বয়সে রুপো পেয়েছিলেন পিভি সিন্ধু। আমন প্যারিসে ব্রোঞ্জ পেলেন ২১ বছর ২৪ দিন বয়সে। সেই সুবাদে অলিম্পিকে সবচেয়ে কম বয়সী অ্যাথলিট হিসেবে পদক জয়ের রেকর্ড গড়েছেন আমন। প্যারিস অলিম্পিকে সেমিফাইনালে হারার পর আমনের ওজন ৪.৬ কেজি বেড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে টানা ১০ ঘণ্টা অনেক পরিশ্রম করে ওজন কমান আমন। এবং ব্রোঞ্জ পদক ম্যাচে পুয়ের্তো রিকোর প্রতিপক্ষকে হারান আমন।
প্যারিস অলিম্পিকে ব্রোঞ্জে সন্তুষ্ট হলেও আমন জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে তাঁর লক্ষ্য সোনা। অলিম্পিকে অভিষেকেই হরিয়ানার ২১ বছরের কুস্তিগির পদক দিয়েছেন দেশকে। আর প্যারিসে ব্রোঞ্জ পাওয়ার পর তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সুশীল কুমারের অলিম্পিকে ২টো পদক রয়েছে। আমনও ২০২৮ এবং ২০৩২ সালের অলিম্পিকে পদক জিততে চান। সেটাই তাঁর লক্ষ্য। একইসঙ্গে আমন তাঁর পদক উৎসর্গ করেছেন মা-বাবাকে। তাঁর কথায়, ‘আমার এই পদক মা-বাবাকে উৎসর্গ করছি। তাঁরা জানেও না, আমি কুস্তিগির হয়েছি।’