সরস্বতী পুজোর উদ্যোক্তাদের রাত জেগে প্যান্ডেল পাহারা দেওয়ার নিদান দিয়েছেন মালদহের পুখুরিয়া থানার ওসি বাপন দাস। তিনি বলেছেন, পুজোর আয়োজকদের রাত পাহারায় থাকার কথা। পুখুরিয়া থানার ওসি বাপন দাসের সেই নিদান দেওয়ার ভিডিও পোস্ট করে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গেল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। সঙ্গে প্রশ্ন তুললেন,‘ছাত্র-ছাত্রীরা রাত জাগবে আর পুলিশ তোলা তুলবে? তৃণমূলকে অপরাধ করার সুযোগ করে দেবে?’
এর পাশাপাশি তিনি এক্স হ্যান্ডেলে এও লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে লক্ষাধিক সরস্বতী পুজোর আয়োজন হয়। গৃহস্থ বাড়ির পুজোর সংখ্যা না হয় গণনার বাইরে রাখলাম। তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাচ্চারা, ছাত্র ছাত্রীরা কি সারারাত জেগে বসে থাকবে? আর পুলিশ কি করবে? পণ্য বহনকারী গাড়ি থেকে তোলা আদায় করবে? তোলামূলী দুষ্কৃতীদের অপরাধ করার সুযোগের সুব্যবস্থার পরিকল্পনা করবে? পুলিশের কথা থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে ঠাকুর অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দায়িত্ব উদ্যোক্তাদের। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বুঝুন এই সরকার ও প্রশাসনের মতলব কি, আমাদের সংস্কৃতির রক্ষা আমাদের স্বয়ং কেই করতে হবে, আর তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে।’ সঙ্গে যোগেশচন্দ্র কলেজে সরস্বতী পুজোর আবহের ছবি পোস্ট করে এও লেখেন, ‘কোনটা যশোর, রংপুর, ঢাকা আর কোনটা কলকাতা, বেলডাঙা, ডায়মন্ড হারবার বুঝতেই পারবেন না।’ এরপরই কটাক্ষ করে লেখেন, ‘ওপার বাংলা আর এপার বাংলা কে মিলিয়ে দিলেন মুহাম্মদ ইউনূস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশকে অনুকরণ করে সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তায় পুজোর রেওয়াজ এপার বাংলায় চালু করালেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ ক্যাম্পাসে পুজো হচ্ছে, না সন্ত্রাসবাদী হামলা প্রতিরোধের মহড়া চলছে বোধগম্য হচ্ছে না। সনাতন সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানা বাংলাদেশে যতটা সহজ, পশ্চিমবঙ্গেও সেই কুরুচিকর ধারার আমদানী আগেই করা হয়েছিল তুষ্টিকরণের রাজনীতি কে বলিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে।’ একইসঙ্গে হুঁশিয়ারির বার্তা, ‘এ তো সবে শুরু, এখনো অনেক দেখা বাকি আছে।’
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েকদিনে কলকাতা-সহ জেলার একাধিক স্কুল কলেজে সরস্বতী পুজোয় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাম জড়িয়েছে শাসকদলের নেতাদের। এরইমধ্যে যোগেশ চন্দ্র ল কলেজের ঘটনায় জল গড়িয়েছে হাইকোর্টে। পুলিশি নিরাপত্তায় সেখানে হচ্ছে পুজো। এই কলেজে পুজোয় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের ছাত্র নেতা সাব্বির আলির বিরুদ্ধে। ধর্ষণ ও প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তা নিয়ে তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি। সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডেলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সেই সাব্বিরের ছবি পোস্ট করেও ক্ষোভ উগরেও দেন শুভেন্দু।
সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ করে শুভেন্দু লেখেন, ‘মমতার পুলিশের নতুন বাণী, পুজোর উদ্যোক্তাদের রাত জাগার হয়রানি! পশ্চিমবঙ্গে দিকে দিকে সরস্বতী পুজোয় বাধা দিচ্ছেন তৃণমূলের ছাত্রনেতা থেকে তৃণমূল বুথ সভাপতি ও স্থানীয় নেতৃত্ববর্গ। উপদ্রবকারী সকলেই শাসক দলের নেতা কর্মী। কোথাও সদলবলে হুমকি দিচ্ছেন তৃণমূলের ছাত্রনেতা সাব্বির আলি তো কোথাও তৃণমূল বুথ সভাপতি আলিমউদ্দিন মণ্ডল বিদ্যালয়ে ঢুকে হুমকি দিচ্ছেন শিক্ষককে।’ এরপরই পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শুভেন্দু লেখেন, ‘পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝতে পেরে পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ আগে থেকেই দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। মালদা পুলিশ জেলার পুখুরিয়া থানার ওসি বাপন দাসের নির্দেশ সরস্বতী পুজোর উদ্যোক্তাদের রাতে পাহারায় থাকতে হবে!’
অন্যদিকে যোগেশের ঘটনায় বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় নিজেও। চাপানউতোরের মধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছ থেকে রিপোর্টও চেয়ে পাঠিয়েছেন। সেই রিপোর্ট ব্রাত্য জমাও দিয়েছেন বলে খবর।