ইরশাদকে পিটিয়ে খুন করার ঘটনায় কাঠগড়ায় হস্টেলের আবাসিকরা

উদয়ন হস্টেলের আবাসকিদের অপরাধ মনস্কতার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন বউবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাসিন্দারাও। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, ‘সরকারি ওই হস্টেলের আবাসিকদের জীবনযাপন অত্যন্ত বিশৃঙ্খল ছিল। যখন-তখন মদের বোতল ট্রাম লাইনে উড়ে আসত। সন্দেহের বসে এ ভাবে পিটিয়ে খুন করার ঘটনা এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ ইরশাদের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ‘হাইপোভলিউমিক শক’-এর কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত বা ‘ফ্লুইড’ না পৌঁছলে এমন অবস্থা হয়ে থাকে। বেপরোয়া ভাবে আঘাতের কারণেই এটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, খুনের ঘটনায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছ’জন, সংস্কৃত কলেজের তিনজন, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের একজন, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এবং এক প্রাক্তন ছাত্র অভিযুক্ত।

স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া সূত্র অনুসারে প্রাণ বাঁচাতে কাতর আর্তি জানিয়েছিলেন টিভি মেকানিক ইরশাদ আলম।  শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘আমাকে ছেড়ে দিন। আমি মোবাইল চুরি করিনি’। তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টে, ব্যাট-উইকেট দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে হাড় ভেঙে দেন আবাসিক ছাত্ররা। শুক্রবার বউবাজারের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, একদিকে যখন হস্টেলের ভিতরে এ ভাবে মারধর চলছে, তখন প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে ছাত্রদের আরেকটি দল তৎপরতা শুরু করে। রাস্তায় বেরিয়ে তাঁরা খোঁজ করতে থাকেন, আশপাশে কোথায় কোথায় সিসিটিভির ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। আচমকা পাশের একটি কেকের দোকানে নজর যায় তাঁদের। এরপর ওই দোকানে গিয়ে হম্বিতম্বি শুরু করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ফুটপাথ থেকে ইরশাদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ফুটেজ দোকানের ক্যামেরা থেকে ডিলিটও করে দেন পড়ুয়ারা।

সঙ্গে এ খবরও মিলেছে, গত শুক্রবার সকালে খবর পেয়ে বাইকে করে দুই পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে যান। হস্টেলের ভিতর থেকে বলা হয়, ‘আপনারা এসেছেন কেন? চলে যান। আমরা বুঝে নেব।’ এরপর মুচিপাড়া এবং বউবাজার থানা থেকে আরও পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কলাপসিবল গেট খুলে দেন আবাসিকরা। ভিতরে ঢুকে পুলিশকর্মীরা দেখতে পান হস্টেলের সিঁড়ির সামনে পড়ে রয়েছেন ইরশাদ। পুলিশ জানতে পেরেছে, ভিতরে নিয়ে যাওয়ার পরে ইরশাদ প্রথমে তাঁর মালিককে ফোন করে ওই হস্টেলে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা বলেন। তারপর ফোন কেটে যায়।

এদিকে ধৃতদের আদালতে পেশ করা হলে সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘অভিযুক্তরা প্রত্যেকে শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান। কিন্তু, নিজেদের প্রতিভা দেশের কাজে না লাগিয়ে, বুদ্ধিমান হয়েও ঘৃণ্য অপরাধ করেছেন।’ যদিও অভিযুক্তদের আইনজীবী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রত্যেকেই ছাত্র। তাঁদের ভবিষ্যৎ রয়েছে। মূল অভিযুক্ত কে, কারা মারধর করেছে, সেই বিষয়ে অভিযোগে কিছুই স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তা ছাড়া তিন ছাত্রের আগামী ৩ জুলাই এমএ পরীক্ষাও রয়েছে। তাঁরা যেন পরীক্ষা দিতে পারেন।’ ওই তিন ছাত্রের আবেদন মঞ্জুর করলেও ধৃত ১৪ জনের ৪ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =