পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৮ হাজারের উপর আসনে হবে না ভোট

পশ্চিমবঙ্গে ২০২৩-এর নির্বাচনে ৬৩ হাজার ২২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন। তার মধ্য ৮ হাজারের উপর আসনেই হবে না ভোট৷ কারণ, জয় এসেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়৷ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপাশি, নির্বাচন হবে না পঞ্চায়েত সমিতির ১০ শতাংশরেও বেশি আসনে। যদিও জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা অনেকটাই কম৷ এখানে এক শতাংশের সামান্য বেশি আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই আসন জয়ের পরিসংখ্যানের নিরিখে শীর্ষস্থানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা৷ যেখানে মনোনয়ন জমা নিয়ে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নিতে দেখা গিয়েছিল। প্রাণ গেছে ৩ জনের৷ অশান্তির আঁচ পাওয়া গিয়েছিল এই দক্ষিন ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকেও।

এদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে যে খবর মিলেছে তাতে সবচেয়ে বেশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসন এই দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই৷৬ হাজার ৩৮৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ১ হাজার ৭৬৭ টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়৷ অন্যদিকে, পঞ্চায়েত সমিতির ৯২৬ টি আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে ২৩৩ টি আসনে৷ একই চেহারা জেলা পরিষদেও। সেখানেও মোট ৮৫ এর মধ্যে ৮ টি আসনে জয় এল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই।

বীরভূমে নেই অনুব্রত।তার অনুপস্থিতি অবশ্য টের পাওয়া গেল না পঞ্চায়েত নির্বাচনে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, অনুব্রতহীন বীরভূম জেলাতেই শুধু ৩০ শতাংশরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে। শতকরা বিচারে দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে পিছনে ফেলেছে বীরভূম।বীরভূমে জয় ২৯.৯৬ শতাংশ আসনে। সেখানে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২৭.১৫ শতাংশ।তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনের বিচারে বীরভূমের চেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা অনেক বেশি। বীরভূমে যেখানে সংখ্যাটা ১ হাজার ০১৯ আর,  দঃ ২৪ পরগনায় তা প্রায় দ্বিগুন, ২ হাজার ০০৮।

কমিশন সূত্রে খবর, সবচেয়ে কম আনকন্টেস্টেড সিট রয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলায়৷ এখানে মোট গ্রাম পঞ্চায়েতে আসন ১২৫২ টি। যার মধ্যে আটটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না, যদিও পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে।

বাঁকুড়া জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১২৯ টি আসনের মধ্যে ৬৬৪ টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না। এই জেলারি পঞ্চায়েত সমিতির ৫৬১ আসনের মধ্যে ১০৬ টি আসনে কোনও নির্বাচন না হলেও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।

কোচবিহার জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫০৭ টি আসনের মধ্যে ১৫৭ টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৮৩ টি আসনের মধ্যে ১৭ টি ও জেলা পরিষদের ৩৪ টি আসনের মধ্যে একটিতে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ১৩০৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে শুধুমাত্র ১১টি আসনেই কোন প্রতিদ্বন্দ্বী বা নির্বাচন হচ্ছে না পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।

দার্জিলিং জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৯৮ টি আসনের মধ্যে চল্লিশটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না অন্যদিকে পঞ্চায়েত সমিতির ১৫৬ টি আসনের মধ্যে নটি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।

হুগলিতে ১০ শতাংশেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে কোন নির্বাচন হবে না যদিও পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৯ টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র ৫৮ টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না। যদিও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনেই নির্বাচন হবে।

হাওড়া জেলার প্রায় ২৫ শতাংশের কাছাকাছি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না অন্যদিকে পঞ্চায়েত সমিতির ৪৭০ টি আসনের মধ্যে ৯৮ টি আসনে কোন নির্বাচন হবে না তবে জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে।

জলপাইগুড়ি জেলার শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েতেরই ১৭০১ টি আসনের মধ্যে ২৯ টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না তবে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে।

ঝাড়গ্রাম জেলায় এক হাজার সাত টি আসনের মধ্যে ৩০ টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না পঞ্চায়েত সমিতির ২১০ টি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে কোন নির্বাচন না হলেও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।

কালিম্পং জেলার অবশ্য দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন এবং একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।

মালদা জেলার জেলা পরিষদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতির ৪৩৬ টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র চারটি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১৮৬ টি আসনের মধ্যে ৪৭ টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না।

মুর্শিদাবাদ জেলায় অবশ্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতির শুধুমাত্র ১২টি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬৬ আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।

নদিয়া জেলার জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল পঞ্চায়েত সমিতির পাঁচটি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলা পরিষদের তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির ১০৪ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৬৭ টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। পাশাপাশি পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৮ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৭২ টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে ৬৭ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬২২টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। পূর্ব বর্ধমান জেলায় জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯৩ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৫৮টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে শুধুমাত্র দুটি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬২টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না।

পুরুলিয়া জেলায় জেলা পরিষদে ও পঞ্চায়েত সমিতিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। এই জেলায় পঞ্চায়েত সমিতিতে শুধুমাত্র একটি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪ টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে।

উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৩টি জেলা পরিষদ ৩১টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ৩০৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। অর্থাৎ রাজ্যের ৮০০২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত ৯৯১ টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১৬ টি জেলা পরিষদের আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে।

তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যের একাধিক জায়গায় এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে।

এখানে এর পাশাপাশি আরও একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরা যাক। গতবার এই ত্রিস্তরীয় নির্বাচনে তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ৯৯.৭০ শতাংশ আসনে। এবার, সেই পরিসংখ্যান নেমে এসেছে ৯৬.৪০ শতাংশে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − 4 =