পুরসভার দুর্নীতি রুখতে এবার রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি। আর সেই কারণেই জেলাশাসকদের হাতে বাড়তি ক্ষমতা তুলে দেওয়াও হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। আর এই ক্ষমতা বৃদ্ধির জেরে এখন থেকে জেলাশাসকরা প্রয়োজনে আধিকারিক পাঠিয়ে পুরসভাগুলিতে নিয়মিত নজরদারি চালাতে পারবেন। তাঁদের অধীনে যে সব অফিসাররা কাজ করেন, তার মধ্য থেকেই পুরসভাগুলিতে নজরদারির জন্য পরিদর্শক মনোনীত করবেন জেলাশাসকরা। দরকার হলে পুরসভার রেজিস্ট্রার, বুকস, অ্যাকাউন্টস সহ সমস্ত সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে দেখতে পারবেন। আর এই নজরদারি চলাকালীন কাজকর্মে কোনও গরমিল পাওয়া গেলে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে রিপোর্টও করবেন জেলাশাসকরা। আর এই রিপোর্ট অনুসারেই সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে পুর দফতর। এখানেই শেষ নয়, ভবিষ্যতে পঞ্চায়েতের মতো পুরসভাগুলিকেও জেলাশাসকদের অধীনে আনার ভাবনা-চিন্তা করছে রাজ্য় সরকার।
এদিকে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, সারা রাজ্যে মোট ১২৫টি মিউনিসিপ্যালিটি রয়েছে। এই সব পুরসভার প্রশাসনিক প্রধান হলেন চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার। সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত আইএএস কিংবা ডব্লুবিসিএস অফিসারদের এই পদে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। চাকরি বাঁচানোর জন্য তাঁদেরকে পুরসভার চেয়ারম্যানের কথা শুনে চলতে হয়। ফলে পুরবোর্ডের কর্তারা কোনও বেনিয়ম করলেও সিইও-দের মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। তাই দুর্নীতি আটকাতে জেলাশাসক বা ডিএম-রা এখন থেকে সরকারের চোখ কান হিসাবে কাজ করবেন। এদিকে নবান্ন সূত্রের খবর, এতদিন পর্যন্ত পুরসভাগুলির উপর নজরদারি করত রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সেখানে আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় থাকছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকরা মাঝে মধ্যেই পরিদর্শনে যেতেন। তারাই সমস্ত আয়-ব্যয়ের হিসেব খতিয়ে দেখতেন। কিন্তু এখন থেকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বদলে সেই কাজ করবেন জেলাশাসকরা।
এই প্রসঙ্গে নবান্নের সূত্রে খবর মিলছে, পুরসভাগুলি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় তাদের উপর নিয়মিত নজর রাখা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাৎই জেরে নানা ধরনের বেনিয়মের ঘটনা ঘটছে। আর এই বেনিয়মের ঘটনা সামনে আসলে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে রাজ্য সরকারেরই। আর এই প্রসঙ্গেই সামনে এসেছে সম্প্রতি পুর নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনা। যার তদন্তে নেমে সিবিআই এবং ইডি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পুরসভার চেয়ারম্যান, মেয়র ইন কাউন্সিলের সদস্যদের দফায় দফায় জেরাও করেছে। এবার এই ধরনের ঘটনা রুখতে পুরসভাগুলিকে প্রত্যক্ষ নজরদারির আওতায় আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেইকারণেই ডিএম’দের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এই দায়িত্ব।