এশিয়ান চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি জিতল ভারত

‘চক দে ইন্ডিয়া’। এটাই বোধহয় সবথেকে ভাল স্লোগান শনিবারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফির ফাইনালের জন্য।শনিবার কলকাতাবাসী মজে ছিল ফুটবল ডার্বি নিয়ে। তারই ফাঁকে এক স্বপ্নের সন্ধ্যা কাটালেন হকিপ্রেমীরা। ১-৩ এর ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও যে ম্যাচ জেতা যায় তা চেন্নাইয়ের মাটিতে করে দেখালেন হরমনপ্রীত সিংয়ের ভারত।

একথা মানতেই হবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফিতে দাপিয়ে খেলে ফাইনালে উঠেছে ভারত। শনিবার তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিলেন মালয়েশিয়া, যাঁরা কোনওদিন এশিয়ান চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফিতে ফাইনালে ওঠেননি। সাফল্য যে তাঁরা পাননি তা নয়, পাঁচ-পাঁচবার ব্রোঞ্জ জিতেছেন। ফলে হেলাফেলা করার মতোও টিম নয়। এদিকে এই মালয়েশিয়াকে গ্রুপ লিগের ম্যাচে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল ভারত। ফলে এদিনের খেলায় তারা যে আন্ডার ডগ ছিলেন তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। আর  সেখানেই বোধহয় পদস্খলন হতে যাচ্ছিল ভারতের।

শুরুটা অবশ্য চ্যাম্পিয়নের মতোই করেছিল ভারত। ৯ মিনিটে ১-০ এগিয়ে যায় হরমনপ্রীতের টিম। ক্রমাগত আক্রমণ, দুটো উইং ব্যবহার করা, বল সাপ্লাই, বিপক্ষের ডি-বক্সে ঢুকে পড়া প্রতিটি মুভেই ধরা পড়েছে আগ্রাসী মনোভাব। জার্মানপ্রীত সিং-কে দেকা গেছে একেবারে টিমের চালিকা শক্তি রূপেই। একের পর এক বল বাড়িয়ে গেছেন তিনি। ৯ মিনিটে তাঁরই ছোঁয়াতে পেনাল্টি কর্নার পেয়ে যায় ভারত। ক্যাপ্টেন হরমনপ্রীত সিং তখন মাঠের বাইরে। তাঁর বদলে ড্র্যাগ ফ্লিকারের ভূমিকায় ছিলেন যুগরাজ সিং। তিনিই ১-০ এগিয়ে দিলেন টিমকে। কিন্তু বিরতির ঠিক আগের মিনিটে অমিত রোহিদাসের একটা ভুল থেকে সমতা ফেরায় মালয়েশিয়া। ডি-বক্সের বাঁদিকে বিপক্ষের এক ফরোয়ার্ডকে আটকাতে গিয়ে ধাক্কা খান তিনি। বল চলে যায় অমিতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অমিতের ওই ভুলটার পরই ভারতীয় ডিফেন্সের মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। তা থেকেই আজরাই আবু কামাল গোল এনে দেল মালয়েশিয়াকে। ১-১ এর মিনিট খানেক পরেই হার্দিক সিং আবার পেনাল্টি কর্নার এনে দিলেন ভারতকে। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি মনদীপ, বিবেকরা।

খেতাব না জিতলেও মালয়েশিয়া যথেষ্ট অভিজ্ঞ টিম তা বোঝা গেল পরের দুটো কোয়ার্টারে।ফাইনালে মালয়েশিয়ান টিম দেখাল, আত্মবিশ্বাস আর ফোকাসের মিশেল থাকলে যে কোনও আগ্রাসী টিমকে চাপে ফেলে দেওয়া যায়। ১৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি কর্নার থেকে ২-১ করে গেলেন ৩০০র বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা রহিম রাজি। অমিত রোহিদাসের স্টিকে লেগে বল ঢুকে যায় গোলে। কিপার কৃষণ পাঠকের কিছুই করার ছিল না। এরপর খেই হারায় ভারতীয় ডিফেন্স।একের পর এক ভুল, ভঙ্গুর ডিফেন্স, বল পজেশন রাখতে না পারা, বিপক্ষকে বক্সের আগে থামাতে না পারার খেসারত দিতে হয় ভারতকে। আর এই সব ভুলের জেরে মালয়েশিয়া এগিয়ে যায় ৩-১-এ।

তখনও নাটকের ক্লাইম্যাক্স হয়নি। তৃতীয় কোয়ার্টারের শেষ দেড়টা মিনিট মোড় ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের। ১-৩ থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে ৩-৩ ভারতের। হরমনপ্রীত গোল করলেন পেনাল্টি থেকে। গুর্জন্ত এনে দিলেন দুরন্ত এক ফিল্ড গোল। ভারতীয় টিমের মনোবল তখন তুঙ্গে। ফের আগ্রাসী মনোভাব প্রতিফলিত হতে থাকে টিম ইন্ডিয়ার মধ্যে। এরপর ৫৫ মিনিটে ৫৫ মিনিটে মালয়েশিয়ার ডি বক্সে টার্ন নিয়ে যে শটটা নিলেন আকাশ, অনেক দিন মনে রাখবে ভারতীয় হকি। এই টুর্নামেন্টে যখনই দরকার পড়েছে মাঠে নেমে অবিশ্বাস্য গোল করেছেন আকাশ। ফাইনালেও জয়সূচক গোল করে গেলেন সেই আকাশদীপ সিং-ই।

এদিকে সামনের মাসে হানঝাউয়ে এশিয়ান গেমস। আগামী বছর প্যারিসে অলিম্পিক। হরমনপ্রীত সিংয়ের ভারতীয় টিম যে জাদু দেখানোর ক্ষমতা রাখে তা শনিবারের সন্ধেয় যেন ফের বুঝিয়ে দিল টিম ইন্ডিয়া।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 13 =