ভারতীয় ক্রিকেটদল চোটের আঁতুড়ঘর, চাপে গিল-গম্ভীর

ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টের প্রথম দিনের শেষে ভারতের রান ৪ উইকেটে ২৬৪।ক্রিজে রয়েছেন  রবীন্দ্র জাদেজা (১৯) ও শার্দূল ঠাকুর (১৯)

ভারতের পুরুষ ক্রিকেট দল এখন চোটের আঁতুড়ঘর হয়ে গিয়েছে। চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন নীতীশ কুমার রেড্ডি। চতুর্থ চেস্ট চোটের জন্য খেলতে পারছেন না আকাশ দীপ ও অর্শদীপ সিং। এবার চোট পেয়ে ম্যাচের মাঝে বেরিয়ে যেতে হল ঋষভ পন্থকে। ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাট করার সময় পায়ে বল লাগে, মাঝেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর মিনি অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তৃতীয় টেস্টে পন্থ চোট পেয়েছিলেন। আঙুলে চোটের জন্য কিপিং করতে পারেননি। চোট সারিয়ে মাঠে নামার পর তিনি চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামেন আর খেলতে নেমে চোট পেলেন।

ফলে প্রথম দিনের শেষে ভারত অধিনায়ক শুভমান গিলকে চিন্তায় রাখবে ঋষভ পন্থের চোট। টেস্টের বাকি সময়টায় তিনি যে অনিশ্চিত হয়ে পড়লেন। ক্রিস ওকসের ডেলিভারি তাঁর বুটে আছড়ে পড়ার সময়ে পন্থ ব্যাট করছিলেন ৩৭ রানে। অবসৃত পন্থের জায়গায় ব্যাট করতে নামেন রবীন্দ্র জাদেজা।

এদিকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের আকাশে বৃষ্টির ভ্রুকুটি। সঙ্গে মেঘলা আবহাওয়া। ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস টস জিতে তাই শুরুতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি। ভারতীয় দলে কিন্তু হল একাধিক বদল। এই সম্ভাবনা ছিল। টেস্ট অভিষেক হল অংশুল কম্বোজের। বাদ পড়েছেন করুণ নায়ার। প্রথম টেস্টের পর ফের প্রথম একাদশে ফিরলেন সাই সুদর্শন। দলে এসেছেন পেসার অলরাউন্ডার শার্দূল ঠাকুরও। ফর্মে না থাকায় বাদ গেলেন করুণ নায়ার। এলেন সাই সুদর্শন। চোটের জন্য নেই আকাশ দীপ ও নীতীশ কুমার রেড্ডি। তাঁদের জায়গায় এলেন অংশুল কম্বোজ ও শার্দূল ঠাকুর।

ভারতের দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল ভারতকে শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার কাজটা করেন। দলীয় রান যখন ৯৪, তখন লোকেশ রাহুল ফেরেন ব্যক্তিগত ৪৬ রানে।

লোকেশ রাহুল অবশ্য ফিরে যাওয়ার আগে নজির গড়েন। মাত্র ৪ রানের জন্য তিনি পঞ্চাশ হাতছাড়া করেন। পঞ্চাশ না পেলেও লোকেশ রাহুল গড়ে ফেলেছেন নতুন এক নজির। দ্বিতীয় ভারতীয় ওপেনার হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে এক হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

নতুন এই নজির গড়তে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রাহুলের দরকার ছিল ২৮ রান। বুধবার ভারতের ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়ে নতুন মাইলফলক ছোঁন রাহুল। প্রথম সেশনের ২৩তম ওভারে নজির গড়েন রাহুল। ইংল্যান্ডের মাটিতে ১০০০ রানের গন্ডি টপকালেন তিনি। পঞ্চম ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে এই রেকর্ড গড়লেন তিনি। তালিকায় শীর্ষে আছেন সচিন তেন্ডুলকর। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে ১৫৭৫ রান করেছেন তিনি। তালিকায় নাম রয়েছে রাহুল দ্রাবিড় (১৩৭৬), সুনীল গাভাসকর (১১৫২) ও বিরাট কোহলির (১০৯৬)

গাভাসকরের আরও একটি রেকর্ডে ভাগ বসালেন রাহুল। দ্বিতীয় ভারতীয় ওপেনার হিসেবে অ্যাওয়ে টেস্টে ১০০০এর বেশি রান করলেন। একমাত্র সুনীল গাভাসকরের এই রেকর্ড রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।  এরপর ৯৮ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে যবনিকা পড়ে লোকেশ রাহুলের। তাঁর ইনিংসে সাজানো ছিল ৪টি বাউন্ডারি। রাহুল পঞ্চাশ করতে না পারলেও যশস্বী কিন্তু পঞ্চাশ করেন। ব্যক্তিগত ৫৮ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন যশস্বী। অধিনায়ক শুভমান গিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ শুরু করেন দুর্দান্ত ভাবে। তাঁকে ফেরানোর জন্য মরিয়া ছিল ইংল্যান্ড ব্রিগেড। স্টোকসের বলে কোনও শট না খেলে এলবিডব্লিুউ হন ভারত অধিনায়ক। এদিন তিনি ব্যর্থ। গিল ফেরার পরে স্টোকসের উচ্ছ্বাস দেখে বোঝা যায় এই উইকেটটার জন্য মুখিয়ে ছিল। শুভমান গিল যখন প্যাভিলিয়নের রাস্তা নেন, তখন ভারতের রান ৩ উইকেটে ১৪০।

সব ঠিকঠাকই চলছিল। ক্রিস ওকসের ইর্য়কার লেন্থের বলটা সুইপের মতো কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন ভারতের তারকা উইকেট কিপার। ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে বল লাগে তাঁর বুটে। ইংল্যান্ড রিভিউ নেয়। কিন্তু দেখা যায় বল পন্থের বুটে লাগার আগে তাঁর ব্যাট ছুঁয়েছিল। পন্থ আউট হলেন না বটে কিন্তু  ওকসের  ওই  ইয়র্কার  লেন্থের  ডেলিভারিটা  পন্থকে  ছিটকেই  দিল। যন্ত্রণায় প্রথমটায় খোঁড়াচ্ছিলেন ভারতের তারকা উইকেট কিপার। তারপর ফিজিও চলে আসেন। শুয়ে পড়েন পন্থ। দাঁড়িয়ে থাকতে আর পারছিলেন না তিনি। শেষমেশ অ্যাম্বুল্যান্স ডাকতে হয় মাঠে। পন্থ সেই অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে বেরিয়ে যান। শুভমান গিল ফিরে যাওয়ার পরে ইংল্যান্ড ম্যাচের উপরে জাঁকিয়ে বসতে পারেনি পন্থের জন্যই। তিনি এবং সাই সুদর্শন ভারতের ইনিংস গড়ার কাজ করছিলেন। ৭২ রান জোডেন দুই ক্রিকেটার। ফলে বোঝাই যাচ্ছে গিল ফিরে যাওয়ার পরে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড ম্যাচে ফিরে আসবে। ভারতকে আরও চাপে ফেলবে। কার্যত সেটা হয়নি পন্থ ও সাই সুদর্শনের জন্য। সাই সুদর্শনের কথাও বলতে হবে। প্রথম টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পরে চতুর্থ টেস্টে তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তিনি কিন্তু প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্যই লড়ছিলেন ম্যাঞ্চেস্টারে। বেন স্টোকস ফেরান সুদর্শনকে। ৬১ রান করেন এই বাঁ হাতি ব্যাটার।

পন্থ অবসৃত হন। নামেন রবীন্দ্র জাদেজা। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মোক্ষম সময়ে ব্যাট করতে নেমেছেন বাঁ হাতি জাদেজা। তার সঙ্গী শার্দূল ঠাকুর ভারতকে প্রথম দিনের শেষে ভদ্রস্থ রানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রথম দিনের শেষে বলতেই হচ্ছে, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নতুন করে পন্থের চোট চাপ বাড়াল  গিলের ওপরে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + 13 =