প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন ভারতীয় শিল্পপতি এবং আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। শনিবার সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় পা রাখেন আদানি গোষ্ঠীর এই কর্ণধার। গোড্ডায় আদানির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি চালু হওয়ার পর এই প্রথম বাংলাদেশে গেলেন গৌতম আদানি। শনিবার আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধারের ঢাকা সফরের ছবিও নিজের টুইটার হ্যান্ডলে দেন গৌতম। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ট্যুইটে লেখেন,‘১৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে চালু এবং হস্তান্তর উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’
এদিকে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি চালু হয়েছে। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে। ‘আদানি পাওয়ার’-এর তরফ থেকে জুন মাসেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল গোড্ডার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি হয়ে যাওয়ার জন্য ভারত এবং বাংলাদেশের কর্মীদেরও অভিনন্দন জানান আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার। এই প্রসঙ্গে টেনেই ট্যুইটে আদানি লেখেন, কোভিড সত্ত্বেও যে ভাবে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সম্পূর্ণ তৈরি করে ফেলা গিয়েছে তাতে ভারত এবং বাংলাদেশের সাহসী সেই দলকে ‘স্যালুট’ জানাই।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয়, গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট ভারত-বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এর পাশাপাশি গোড্ডা থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে তরল জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকে প্রতিস্থাপন করবে। শুধু তাই নয়, গোড্ডা প্ল্যান্ট প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, বিদ্যুৎ ক্রয়-চুক্তির অধীনে গোড্ডা প্ল্যান্ট ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহও করবে বলে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সাথে মউ স্বাক্ষরও হয়।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ ঢাকার মাটি স্পর্শ করে আদানির চার্টার্ড বিমান। বিমানবন্দর থেকে আদানি সোজা চলে যান গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সারেন। এরপর দুপুর সওয়া একটায় আবার নিজের বিমানে ভারতে ফিরে আসেন গৌতম। প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বরে যখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ভারত সফরে এসেছিলেন, সেই সময়ও তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন গৌতম। এরপর তাঁদের আবার সাক্ষাৎ হয় শনিবার।
এদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় আদানি গ্রুপের নির্মিত এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসেন গৌতম আদানি।
এই প্রসঙ্গে এটাও বলতে হয়,কোভিড মহামারির আবহে যা প্রকল্পের টাইমলাইনে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এক প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালেও আদানির ইঞ্জিনিয়ারিং দল উদ্ভাবনীভাবে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, টেলি-কথোপকথন এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দূর থেকে সমস্ত পরীক্ষা এবং কমিশনিং প্রোটোকলও পরিচালনা করে। রেকর্ড সময়ের মধ্যে প্রকল্পের চালু হওয়া প্রমাণ করেছে যে এই ক্ষেত্রে আদানির ক্ষমতা সত্যিই বিশ্বমানের এবং সারা বিশ্বের শিল্পের সেরাদের সাথে তারা সমতুল্য। পাশাপাশি এটাও আশা করা যাচ্ছে যে, গড্ডা থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ তরল জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এই কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই দুই দেশের মধ্যে মধ্যে কূটনৈতিক বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলকও হিসেবও চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, আদানি পাওয়ার প্রতিযোগিতামূলক শুল্কে নিরবচ্ছিন্ন এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির এক অংশীদারও হয়ে উঠেছে। এই সহযোগিতার ফলে শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়াবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।